Monday, December 2, 2024

মা কামতেশ্বরী সেতু : সিতাইবাসীর আকাঙ্খা

 মা কামতেশ্বরী সেতু : সিতাইবাসীর আকাঙ্খা


কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার একটি সীমান্তবর্তী ব্লক হল সিতাই। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ১৫১ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে অবস্থান করা এই সিতাই ব্লকের মানুষ কোচবিহার জেলার অন্যান্য প্রান্ত থেকে দীর্ঘদিন ধরে একপ্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল । এর কারন শুধুমাত্র এই এলাকা  সীমান্তবর্তী ছিল বলেই নয় বরং দিনহাটা ও সিতাই এর মাঝখানে প্রবাহিত সিঙিমারী নদীর অবস্থান অনেকাংশে দায়ী ছিল। নদীর ওপর সেতু না থাকায় এপ্রান্তের লোক নদী পেরিয়ে সিতাইতে যেতে চাইত না । কেননা নদী পেরোতে অনেক সমস্যা যেমন নৌকোর ভাড়া , সময়ের অপচয় , বিকেল পেরোলে নৌকা না পাওয়া ইত্যাদির মুখোমুখি হতে হত। কিন্তু সিতাই ব্লকের লোকেদের তো এপাড়ে আসতেই হয় সেটা অফিসের কাজেকর্মে হোক কিংবা উচ্চশিহ্মা লাভ করতে , তাদের রেহাই নেই।

উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত নদী জলঢাকা এই অঞ্চলে মানসাই ও সিঙিমারী নামে পরিচিত। গোসানিমারী সংলগ্ন এই নদীটি গ্রীষ্মকালে তেমন জল না থাকলেও বর্ষাকাল সহ বছরের অধিকাংশ সময় ভয়াবহ আকার ধারন করত । বর্ষাকালে এই নদীটিতে নৌকাডুবির মতো ঘটনাও ঘটত । নদীতে সেতু না থাকায় যাতায়তের জন্য কোন যানবাহন চলাচল সম্ভব ছিল না । যাতায়তের জন্য একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা । সবসময় নৌকা না থাকায় সাধারন মানুষকে  অনেক সমস্যার সন্মুখিন হতে হত। অনেক মুমুর্ষ রোগীকে দিনহাটা বা কোচবিহারে নিয়ে আসতে গেলে দীর্ঘ পথ ঘুরে মাথাভাঙা হয়ে আসতে হত । ফলে অনেকের প্রান সংকট দেখা দিত । ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিহ্মা গ্রহনের জন্য দিনহাটা কোচবিহারে ভাড়া বাড়িতে থাকতে বাধ্য হত। অথচ সেতু থাকলে নিত্যদিন যাতায়ত করা কোনরকম অসুবিধাজনক ছিল না । তাই সিতাইবাসী দীর্ঘদিন ধরে এই নদীতে একটি সেতুর দাবী করে আসছিল । আদাবাড়ী , ব্রহ্মত্তরচাত্রা , সিতাই ১ , সিতাই ২ ও চামটা এই পাচটি অঞ্চলে নিয়ে গঠিত সিতাই ব্লকে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করে । কোচবিহার শহর থেকে সিতাই প্রায় ৪৫ কিমি দুরত্বে অবস্থিত । সিতাই থেকে মহকুমা দিনহাটার দুরত্ব প্রায় ২৫ কিমির মতো। নিত্যদিনের কাজে কর্মে এলাকার জনসাধারনকে প্রায় প্রতিদিন দিনহাটা , কোচবিহারে যাতায়ত করতে হয় । দুরত্ব খুব বেশি না হলেও একমাত্র সমস্যা হত নদী পার করার সময় । সাগরদিঘী ও আদাবাড়ী ঘাটের নৌচলাচলের সুবিধা বহাল থাকলেও বর্ষাকালে নদী পেরোনো যথেষ্ঠ ঝুকি পূর্ন হত। 

অবশেষে ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় সিঙিমারী নদীর উপর দেবী কামতেশ্বরী সেতুর উদ্ধোধন করলে সিতাইবাসীর দাবী পূর্ণতা পায় । ২০১১ সালে সাগরদিঘী ঘাট সংলগ্ন কামতেশ্বরী সেতুটির নির্মান কাজ শুরু হয় । প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৯৪৪ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মান সম্পূর্ণ হয় ২০২১ সালে । পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় ২০২১ সালে শিলিগুড়ি  সংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে সিঙিমারী নদীর উপর দেবী কামতেশ্বরী সেতুর উদ্ধোধন করার পর সেতুটি জনসাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হয় । প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে গোসানিমারীর জনপ্রিয় দেবী মা কামতেশ্বরীর নাম অনুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয় মা কামতেশ্বরী সেতু । 

কামতেশ্বরী সেতু তৈরি হওয়ায় এখন সিতাই এলাকার  যোগাযোগ অনেক উন্নত হয়েছে । গভীর রাতের যখনতখন এলাকাবাসী দিনহাটা কোচবিহারে যাতায়ত করতে পারে ।  তাছাড়া সিতাই-কোচবিহার , সিতাই-দিনহাটা গামী  বাস চলাচল এখন চালু হয়েছে । পিছিয়ে পড়া সিতাই এর মানুষ এখন সহজে ব্যবসা বানিজ্য চালাতে , অফিসের কাজে , উচ্চশিহ্মা লাভ করতে শহরে আসতে পারছে । এবং কাজের শেষে মা কামতেশ্বরীর কৃপায় নিরাপদে সেতু পেরিয়ে ঘরে ফিরতে পারছে ।

No comments:

Post a Comment