Showing posts with label Extra. Show all posts
Showing posts with label Extra. Show all posts

Monday, December 2, 2024

মা কামতেশ্বরী সেতু : সিতাইবাসীর আকাঙ্খা

 মা কামতেশ্বরী সেতু : সিতাইবাসীর আকাঙ্খা


কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার একটি সীমান্তবর্তী ব্লক হল সিতাই। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ১৫১ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে অবস্থান করা এই সিতাই ব্লকের মানুষ কোচবিহার জেলার অন্যান্য প্রান্ত থেকে দীর্ঘদিন ধরে একপ্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল । এর কারন শুধুমাত্র এই এলাকা  সীমান্তবর্তী ছিল বলেই নয় বরং দিনহাটা ও সিতাই এর মাঝখানে প্রবাহিত সিঙিমারী নদীর অবস্থান অনেকাংশে দায়ী ছিল। নদীর ওপর সেতু না থাকায় এপ্রান্তের লোক নদী পেরিয়ে সিতাইতে যেতে চাইত না । কেননা নদী পেরোতে অনেক সমস্যা যেমন নৌকোর ভাড়া , সময়ের অপচয় , বিকেল পেরোলে নৌকা না পাওয়া ইত্যাদির মুখোমুখি হতে হত। কিন্তু সিতাই ব্লকের লোকেদের তো এপাড়ে আসতেই হয় সেটা অফিসের কাজেকর্মে হোক কিংবা উচ্চশিহ্মা লাভ করতে , তাদের রেহাই নেই।

উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত নদী জলঢাকা এই অঞ্চলে মানসাই ও সিঙিমারী নামে পরিচিত। গোসানিমারী সংলগ্ন এই নদীটি গ্রীষ্মকালে তেমন জল না থাকলেও বর্ষাকাল সহ বছরের অধিকাংশ সময় ভয়াবহ আকার ধারন করত । বর্ষাকালে এই নদীটিতে নৌকাডুবির মতো ঘটনাও ঘটত । নদীতে সেতু না থাকায় যাতায়তের জন্য কোন যানবাহন চলাচল সম্ভব ছিল না । যাতায়তের জন্য একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা । সবসময় নৌকা না থাকায় সাধারন মানুষকে  অনেক সমস্যার সন্মুখিন হতে হত। অনেক মুমুর্ষ রোগীকে দিনহাটা বা কোচবিহারে নিয়ে আসতে গেলে দীর্ঘ পথ ঘুরে মাথাভাঙা হয়ে আসতে হত । ফলে অনেকের প্রান সংকট দেখা দিত । ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিহ্মা গ্রহনের জন্য দিনহাটা কোচবিহারে ভাড়া বাড়িতে থাকতে বাধ্য হত। অথচ সেতু থাকলে নিত্যদিন যাতায়ত করা কোনরকম অসুবিধাজনক ছিল না । তাই সিতাইবাসী দীর্ঘদিন ধরে এই নদীতে একটি সেতুর দাবী করে আসছিল । আদাবাড়ী , ব্রহ্মত্তরচাত্রা , সিতাই ১ , সিতাই ২ ও চামটা এই পাচটি অঞ্চলে নিয়ে গঠিত সিতাই ব্লকে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করে । কোচবিহার শহর থেকে সিতাই প্রায় ৪৫ কিমি দুরত্বে অবস্থিত । সিতাই থেকে মহকুমা দিনহাটার দুরত্ব প্রায় ২৫ কিমির মতো। নিত্যদিনের কাজে কর্মে এলাকার জনসাধারনকে প্রায় প্রতিদিন দিনহাটা , কোচবিহারে যাতায়ত করতে হয় । দুরত্ব খুব বেশি না হলেও একমাত্র সমস্যা হত নদী পার করার সময় । সাগরদিঘী ও আদাবাড়ী ঘাটের নৌচলাচলের সুবিধা বহাল থাকলেও বর্ষাকালে নদী পেরোনো যথেষ্ঠ ঝুকি পূর্ন হত। 

অবশেষে ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় সিঙিমারী নদীর উপর দেবী কামতেশ্বরী সেতুর উদ্ধোধন করলে সিতাইবাসীর দাবী পূর্ণতা পায় । ২০১১ সালে সাগরদিঘী ঘাট সংলগ্ন কামতেশ্বরী সেতুটির নির্মান কাজ শুরু হয় । প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৯৪৪ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মান সম্পূর্ণ হয় ২০২১ সালে । পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় ২০২১ সালে শিলিগুড়ি  সংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে সিঙিমারী নদীর উপর দেবী কামতেশ্বরী সেতুর উদ্ধোধন করার পর সেতুটি জনসাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হয় । প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে গোসানিমারীর জনপ্রিয় দেবী মা কামতেশ্বরীর নাম অনুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয় মা কামতেশ্বরী সেতু । 

কামতেশ্বরী সেতু তৈরি হওয়ায় এখন সিতাই এলাকার  যোগাযোগ অনেক উন্নত হয়েছে । গভীর রাতের যখনতখন এলাকাবাসী দিনহাটা কোচবিহারে যাতায়ত করতে পারে ।  তাছাড়া সিতাই-কোচবিহার , সিতাই-দিনহাটা গামী  বাস চলাচল এখন চালু হয়েছে । পিছিয়ে পড়া সিতাই এর মানুষ এখন সহজে ব্যবসা বানিজ্য চালাতে , অফিসের কাজে , উচ্চশিহ্মা লাভ করতে শহরে আসতে পারছে । এবং কাজের শেষে মা কামতেশ্বরীর কৃপায় নিরাপদে সেতু পেরিয়ে ঘরে ফিরতে পারছে ।

poem কবিতা All


Saturday, August 24, 2024

প্রসঙ্গ শিহ্মক দিবস

 প্রসঙ্গ শিহ্মক দিবস 

স্বপন কুমার রায় M.A , B.ED(NBU)

বলা হয়ে থাকে Teachers are the backbone of the society অর্থাৎ শিহ্মকরা সমাজের মেরুদন্ড ।আজকে যারা ছাত্র তারাই  সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম , আগামী দিনের নাগরিক । তাদের প্রকৃত শিহ্মায় শিহ্মিত করে , আাদর্শ দ্বায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তুলতে যাদের অবদান সর্বোচ্চ তারা হলেন শিহ্মক। An Ideal teacher can build ideal nation অর্থাৎ আদর্শ শিহ্মক আদর্শ জাতি গঠন করে । শিহ্মক বলতে শুধুমাত্র প্রথাগত শিহ্মকরাই নয় আমরা যাদের কাছে শিখতে পারি তারাই আমাদের শিহ্মক। সর্বপ্রথম একজন শিশু তার বাবা মায়ের কাছে শেখে তাই বাবা মা প্রথম শিহ্মক । তারা বিভিন্ন নীতিশিহ্মা দেন।  স্কুল কলেজের শিহ্মকরা আমাদের দ্বিতীয় শিহ্মক । তারা আমাদের পড়াশুনায় পারদর্শী করার পাশাপাশি জীবনশৈলী শেখান । শিহ্মক দিবসের শুভহ্মনে সকল শিহ্মক জাতীকে আমরা সন্মানের সঙ্গে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি ।

আন্তর্জাতিক শিহ্মক দিবস পালিত হয় 5 ই অক্টোবর , তবে আমাদের ভারতে আমরা 5 ই সেপ্টেম্বর শিহ্মক দিবস পালন করি । কেননা 5 ই সেপ্টেম্বর আমাদের ভারতের মহান শিহ্মক ডঃসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান এর জন্মদিন। তার জন্মদিনকে আমরা শিহ্মক দিবস হিসাবে পালন করি ।।



1. ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান সম্পর্কে কিছু কথা :- 

ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তামিলনাড়ুর তিরুত্তানিতে 1888 সালের 5 সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সর্বপল্লী বীরস্বামী এবং মাতার নাম সীতাম্মা।ছোটবেলা থেকেই তিনি লেখা-পড়ায় খুব ভালো ছিলেন। জীবনে কোনো পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি। ফলে বিভিন্ন স্কলারশিপ  বিভিন্ন বৃত্তির মাধ্যমে তার ছাত্র জীবন এগিয়ে চলে। 1905 সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর (M.A) ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। 1952 সালে, ড. রাধাকৃষ্ণন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং 1962 সালে দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। 

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার  ছাত্র ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেন যে তার জন্মদিন পালন করার পরিবর্তে 5 সেপ্টেম্বর দিনটিকে  যদি শিক্ষক দিবস উদ্‌যাপন করা হয় তবে তিনি বিশেষরূপে খুশি হবেন। এভাবেই তার জন্মদিনকে সমগ্র  শিহ্মকগণকে সন্মান জানানোর জন্য উদযাপিত হয়ে আসছে ।

2. শিহ্মক দিবস সম্পর্কে কিছু কথা :-

 শিহ্মক বিহীন আমরা কেউ নই। আমাদের প্রত্যেকের শিহ্মক রয়েছে ।  দাঁড় যেমন নৌকাকে সঠিক দিকে লহ্ম্যে পৌছে দেয় তেমনি শিহ্মক আমাদের সঠিক দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রানিত করে । He is actually a friend , philosopher and guider to the students. একজন দার্শনিকের মতো ভালো মন্দের শিহ্মা দেয় । পথপ্রদর্শকের মতো সঠিক ভাবে আমাদের পথের সন্ধান দেয় ।শিহ্মক প্রসঙ্গে ডঃ রাধাকৃষ্ণান বলেছেন ,'The true teachers are those who help us think of ourselves.' আবার ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম শিহ্মকতাকে মহৎ পেশা বলে উল্লেখ করেছেন । তিনি বলেছেন ,' Teaching is a very noble profession that shapes the character, calibre, and future of an individual. If the people remember me as a good teacher, that will be the biggest honour for me.' 

3. বর্তমান সময়ে শিহ্মক দিবসের প্রাসঙ্গিকতা :- 

বর্তমান সময়ে শিহ্মক দিবস খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে । ছাত্র শিহ্মক সম্পর্ক যেভাবে তলানিতে এসে পড়েছে তাতে শিহ্মক দিবস খুব প্রাসঙ্গিক ।  আমাদের জ্ঞান দাতা , বুদ্ধি দাতা , আমাদের পথপ্রদর্শক , সকল শিহ্মকগনকে জানাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে শতকোটি প্রনাম। বেশিরভাগ স্কুল ও সেন্টার শিহ্মা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। শিক্ষার্থীরা দিনটি উদযাপন করার জন্য অনেক আয়োজন করে। দিনটি সাধারণত শিক্ষকদের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানাতে একটি উষ্ণ শিক্ষক দিবসের বক্তৃতা দিয়ে শুরু হয়। 


Wednesday, July 17, 2024

শিক্ষক দিবস Teachers Day

 মহান শিক্ষক শ্রী শ্রী সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিবস উদযাপন উপলক্ষে 

শিক্ষক দিবস উদযাপন-2023

স্থান:- বিবেকানন্দ কোচিং সেন্টার, নেতাজি বাজার, সিতাই, কোচবিহার।

তারিখ:- 5 ই সেপ্টেম্বর , 2023 , মঙ্গলবার।

অনুষ্ঠানসূচী :-

1. শিক্ষক ও অতিথি বরণ :- সকাল 7 টা।

2. মাল্যদান ও প্রদীপ প্রজ্জলন :- সকাল 7 টা 5 মিনিট।

3. উদ্বোধনী সঙ্গীত :- সকাল 7 টা 10 মিনিট।

4.শিক্ষক ও অতিথিদের বক্তব্য :- সকাল 7 টা 15মিনিট।

5. কবিতা আবৃতি :- সকাল 7 টা 30 মিনিট।

                              (i) বোম্বাগড়ের রাজা ( ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেনী)

                              (ii) কান্ডারী হুশিয়ার ( নবম  ও দশম শ্রেনী)

                              (iii) দুই বিঘা জমি ( একাদশ ও  দ্বাদশ শ্রেনী)

6. তাৎক্ষনিক বক্তৃতা ( নবম  থেকে দ্বাদশ শ্রেনী) সকাল 8 টা 15মিনিট।

                              বিষয় :- শিক্ষক দিবস প্রসঙ্গ ।      সময় :- 2 মিনিট।

7. প্রাক্তন মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান :- সকাল 8 টা 40 মিনিট।

8. নাটক :- সকাল 9 টা ।

9. নৃত্য প্রতিযোগিতা ।

10. পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান :- সকাল 9 টা 45 মিনিট।

11. অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি :- সকাল 10 টায়।

উক্ত অনুষ্ঠানে সকল ছাত্রছাত্রী , প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সাদর আমন্ত্রন রইল।

বিনীত, 

সকল ছাত্রছাত্রীবৃন্দ


দুই বিঘা জমি


শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই   আর সবই গেছে ঋণে।

বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন,   এ জমি লইব কিনে।’

কহিলাম আমি, “তুমি ভূস্বামী,   ভূমির অন্ত নাই।

চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর   মরিবার মতো ঠাঁই।’

শুনি রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখান

পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে   সমান হইবে টানা–

ওটা দিতে হবে।’ কহিলাম তবে   বক্ষে জুড়িয়া পাণি

সজল চক্ষে, “করুণ বক্ষে   গরিবের ভিটেখানি।

সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ   সে মাটি সোনার বাড়া,

দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে   এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’

আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল   রহিল মৌনভাবে,

কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে,  “আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’



পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে   বাহির হইনু পথে–

করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি   মিথ্যা দেনার খতে।

এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায়   আছে যার ভূরি ভূরি–

রাজার হস্ত করে সমস্ত   কাঙালের ধন চুরি।

মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান   রাখিবে না মোহগর্তে,

তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল   দু বিঘার পরিবর্তে।

সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে   হইয়া সাধুর শিষ্য

কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য!

ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে   যখন যেখানে ভ্রমি

তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে   সেই দুই বিঘা জমি।

হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে   বছর পনেরো-ষোলো–

একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে   বড়ই বাসনা হল।


নমোনমো নম সুন্দরী মম   জননী বঙ্গভূমি!

গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর,   জীবন জুড়ালে তুমি।

অবারিত মাঠ, গগনললাট  চুমে তব পদধূলি,

ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়   ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।

পল্লবঘন আম্রকানন   রাখালের খেলাগেহ,

স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল–  নিশীথশীতল স্নেহ।

বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ   জল লয়ে যায় ঘরে–

মা বলিতে প্রাণ করে আনচান,   চোখে আসে জল ভরে।

দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে   প্রবেশিনু নিজগ্রামে–

কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি   রথতলা করি বামে,

রাখি হাটখোলা, নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে

তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে   আমার বাড়ির কাছে।



বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া   চারি দিকে চেয়ে দেখি–

প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে,   সেই আমগাছ একি!

বসি তার তলে নয়নের জলে   শান্ত হইল ব্যথা,

একে একে মনে উদিল স্মরণে   বালক-কালের কথা।

সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে  রাত্রে নাহিকো ঘুম,

অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি   আম কুড়াবার ধুম।

সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর,   পাঠশালা-পলায়ন–

ভাবিলাম হায় আর কি কোথায়   ফিরে পাব সে জীবন!

সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস   শাখা দুলাইয়া গাছে,

দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল   আমার কোলের কাছে।

ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে   আমারে চিনিল মাতা,

স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে   বারেক ঠেকানু মাথা।


হেনকালে হায় যমদূত-প্রায়  কোথা হতে এল মালী,

ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে   পাড়িতে লাগিল গালি।

কহিলাম তবে, “আমি তো নীরবে   দিয়েছি আমার সব–

দুটি ফল তার করি অধিকার,   এত তারি কলরব!’

চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে  কাঁধে তুলি লাঠিগাছ–

বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে   ধরিতেছিলেন মাছ।

শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন,   “মারিয়া করিব খুন!’

বাবু যত বলে পারিষদ-দলে   বলে তার শতগুণ।

আমি কহিলাম, “শুধু দুটি আম  ভিখ মাগি মহাশয়!’

বাবু কহে হেসে, “বেটা সাধুবেশে   পাকা চোর অতিশয়।’

আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি,   এই ছিল মোর ঘটে–

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ,   আমি আজ চোর বটে


নবম ও দশম শ্রেনী


কান্ডারী হুশিয়ার!

- কাজী নজরুল ইসলাম

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার 

লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার! 


দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ, 

ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ? 

কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। 

এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। 


তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান! 

যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান। 

ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান, 

ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার। 


অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন 

কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন। 

হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? 

কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার 


গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ, 

পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ! 

কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ? 

করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার! 


কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর, 

বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর! 

ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর! 

উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার। 


ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান, 

আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান 

আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ? 

দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!


বোম্বাগড়ের রাজা
সুকুমার রায়
কেউ কি জান সদাই কেন বোম্বাগড়ের রাজা
ছবির ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখে আমসত্ত ভাজা ?
রানীর মাথায় অষ্ট প্রহর কেন বালিশ বাঁধা ?
পাঁউরুটিতে পেরেক ঠোকে কেন রানীর দাদা ?
কেন সেথায় সর্দি হ'লে ডিগ্‌বাজি খায় লোকে ?
জোছনা রাতে সবাই কেন আলতা মাখায় চোখে ?
ওস্তাদেরা লেপ মুড়ি দেয় কেন মাথায় ঘাড়ে ?
টাকের 'পরে পণ্ডিতেরা ডাকের টিকিট মারে ?

রাত্রে কেন ট্যাঁক্‌ঘড়িটা ডুবিয়ে রাখে ঘিয়ে ?
কেন রাজার বিছ্‌না পাতা শিরীষ কাগজ দিয়ে ?
সভায় কেন চেঁচায় রাজা 'হুক্কা হুয়া' ব'লে ?
মন্ত্রী কেন কল্‌সী বাজায় ব'সে রাজার কোলে ?
সিংহাসনে ঝোলায় কেন ভাঙা বোতল শিশি ?
কুমড়ো দিয়ে ক্রিকেট খেলে কেন রাজার পিসি ?
রাজার খুড়ো নাচেন কেন হুঁকোর মালা প'রে ?
এমন কেন ঘটছে তা কেউ বলতে পার মোরে ?