Thursday, November 14, 2024

xii বাংলা সাহিত্য

 **** বাংলা চিত্রকলাচচীর ধারায় শিল্পী নন্দলাল বসুর কৃতিত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: 

  "তোমার তুলিকা রঞ্জিত করে 

ভারত-ভারতী চিত্ত,

 বঙ্গলক্ষ্মী ভান্ডারে সে যে 

যোগায় নূতন বিত্ত।”

শিল্পী নন্দলাল বসুর প্রতি কবি রবীন্দ্রনাথের এই উক্তিটির মধ্য দিয়ে আমরা শিল্পী নন্দলাল বসুর প্রতিভার পরিচয় পাই। বাঙালির চিত্রকলাচর্চার পথে এক ভিন্নতর পথিক স্বভাবশিল্পী নন্দলাল বসু। মায়ের কাছ থেকে শিল্পীসত্তা পাওয়া এই চিত্রী, স্কুলের খাতায় নোট লেখার বদলে একমনে ছবি আঁকতেন। অতি শৈশবেই দুর্গা, গণেশ, হাতি, ষাঁড় প্রভৃতির মূর্তি বানিয়ে উৎসব ও মেলায় তা প্রদর্শন করতেন।

বিহারের মুঙ্গের থেকে কলকাতায় পড়তে এসে প্রথাগত পড়াশোনায় ব্যর্থ হন নন্দলাল-পরীক্ষায় পাশ করতে পারতেন না। তাই তিনি অঙ্কন শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং একসময় শিল্পাচার্য-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে আসেন।

অবনীন্দ্রনাথের কাছে পাঁচ বছর অঙ্কন শিক্ষা নন্দলাল বসুর জীবন ও কর্মধারায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। চিত্রকলা বিষয়ে তাঁর স্বাধীন চিন্তাভাবনার সূত্রপাত এখান থেকেই। তাঁর শিল্পীসত্তার পরিচয় মেলে সতী , শিবসতী , জগাইমাধাই,  নটরাজের তাণ্ডব,  জতুগৃহ,  দাহ , অহল্যার শাপমুক্তি , যম ও নচিকেতা ইত্যাদি ছবিতে।বাঁধা ছকে না-চলা এই শিল্পী রূপনির্মাণে ও বর্ণবিন্যাসে সমকালীন শিল্পীদের থেকে ভিন্নপথে হেঁটেছেন।

নেচার স্টাডি: নন্দলালই প্রথম যিনি ভারতীয় শিল্পশিক্ষায় নেচার স্টাডির ওপর গুরুত্ব দেন। চিত্রী নন্দলাল বসু ভগিনী নিবেদিতার পরামর্শমতো গোয়ালিয়র গিয়ে অজন্তার গুহাচিত্র নকল করার কাজ করেন। বইয়ের প্রচ্ছদ অঙ্কন ও অলংকরণে তাঁর ব্যতিক্রমী প্রতিভা প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের 'সহজপাঠ'-এর নাম এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য। স্বদেশি ভাবনায় ভরপুর ছিলেন এই শিল্পী। তাঁর আঁকা সাদা-কালোয় চলমান লাঠি হাতে গান্ধিজির ছবিটি অহিংস আন্দোলনের আইকনে পরিণত হয়। আবার স্বাধীন ভারতের সংবিধান অলংকরণ ভারতরত্ন এবং পদ্মশ্রীর মতো বিভিন্ন পুরস্কারের নকশাও করেন তিনি।

সুগভীর নিষ্ঠার সঙ্গে সহজ আনন্দের মেলবন্ধনকারী শিল্পী নন্দলাল বসু শিল্পের ক্ষেত্রে চিরকালই আনন্দের বার্তা বহন করে যাবেন।


*** বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে জোড়াসাকো ঠাকুর বাড়ির অবদান আলোচনা করো ।

উত্তর:- বাঙালির বিজ্ঞানভাবনা ও বিজ্ঞানচর্চার সূচনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির পরিমন্ডলেই ঘটেছিল। ঠাকুর পরিবার থেকে প্রকাশিত বালক, ভারতী, সাধনা পত্রপত্রিকাতে বিজ্ঞান বিষয়ক বহু রচনা প্রকাশিত হত। কুসংস্কার দূরীকরণে দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভূমিকা, চিকিৎসা শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর দান, শবব্যবচ্ছেদ প্রবর্তনে তাঁর প্রচেষ্টা, হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা ইত্যাদির কথা জানা যায়। 

দ্বারকানাথের জ্যেষ্ঠপুত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের প্রিয় বিষয় ছিল জ্যোতির্বিদ্যা। বিশ্বপরিচয় গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ পিতার এই বিশেষ দিকটির প্রতি আলোকপাত করেছেন। স্বর্ণকুমারী দেবীর জ্যোতিষশিক্ষাও দেবেন্দ্রনাথের হাত ধরে। তাঁর পৃথিবী (১২৮৯ বঙ্গাব্দ) গ্রন্থে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভূমিকাই মুখ্য। জ্যোতির্বিজ্ঞান ছাড়াও ভূতত্ত্বে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে দেবেন্দ্রনাথের প্রশ্নাতীত পাণ্ডিত্য ছিল। জ্ঞান ও ধর্মের উন্নতি বইতে ভূতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব বিষয়ে তাঁর সেই অধিকারেরই প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

দ্বারকানাথের জ্যেষ্ঠপুত্র দেবেন্দ্রনাথের প্রিয় বিষয় ছিল জ্যোতির্বিদ্যা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর ভাইবোনেরা দেবেন্দ্রনাথের কাছে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা করেন। রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্য রচনা জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক এবং তা দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতারই ফসল। স্বর্ণকুমারী দেবী রচিত বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ 'পৃথিবী'-তে জ্যোতির্বিজ্ঞান-এর প্রভাব গভীরভাবে লক্ষ করা যায়। দেবেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ গণিত শাস্ত্রে বিস্ময়কর ব্যুৎপত্তির পরিচয় দেন। তিনি ইউক্লিডের জ্যামিতি নিয়ে আধুনিক চিন্তাভাবনা করেন। রবীন্দ্রনাথের সেজদা হেমেন্দ্রনাথ চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার জন্য কিছুদিন মেডিকেল কলেজে অধ্যয়ন করেন। 'প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের স্থূলমর্ম' তাঁর লেখা একটি অনন্য গ্রন্থ।

বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথকে বিজ্ঞানপাঠ ও অনুশীলনে ব্যাপৃত থাকতে দেখা যায়। পরবর্তী জীবনে বিজ্ঞানবিষয়ক যে সকল রচনা রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, তার মধ্যে রয়েছে বহুবিধ বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ, বিজ্ঞান নিবন্ধের সমালোচনা এবং বিজ্ঞান গ্রন্থের ভূমিকা। তিনি 'বিশ্বপরিচয়' গ্রন্থে অপার বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় দিয়েছেন।


***  বাঙালি বিজ্ঞান সাধক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান লেখো।


উঃ  "যাঁরা বলেন যে, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা সম্ভব নয়, তারা হয় বাংলা জানে না, নয়তো বিজ্ঞান জানেন না" এই চিরস্মরণীয় উক্তিটি করেছিলেন উপমহাদেশের একজন শ্রেষ্ঠতম প্রতিভা সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তিনি বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞান সাধক।


বিজ্ঞান শিক্ষা: ১৯০৯ সালে হিন্দু স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে  ১৯১১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই এস সি পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করেন। তারপর ১৯১৩ সালে গণিতে অনার্স নিয়ে শীর্ষস্থান, এবং ১৯১৫ সালে মিশ্র গণিতে বিজ্ঞান স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় পাশ করেন।


বিজ্ঞানচর্চা: ১৯২৯ খ্রিঃ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার 'রিডার' হিসাবে যোগদান করেন। ২৪ বছর গবেষণায় তিনি বহু মূল্যবান সূত্র আবিষ্কার করেন। যার মধ্যে অন্যতম 'এক্স রে ক্রিস্টালোগ্রাফি'। এছাড়াও তিনি তাঁর পৃথিবী বিখ্যাত 'বোস সংখ্যায়ন' গবেষণার জন্য চির শ্রদ্ধেয়।   তিনি আবিষ্কার করেন ফোটনের সংখ্যায়ন নির্ধারণের বিষয়টি। এমনকি এক্ষেত্রে কণাবাদের উপর বিশেষ ভিত্তি দান করেন। এসব ছাড়াও বোসের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গবেষণার বিষয় হল মহাকর্ষ বল, বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বল, সতেজ বল, ক্ষীণ বল- এগুলির একীকরণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। সহকর্মী মেঘাদ সাহার সঙ্গে তিনি 'সাহা-বোস সমীকরণে' গ্যাসের অবস্থা বর্ণনা সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন এবং বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন।

সম্মান: ১৯২৯ খ্রিঃ বোস ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে পদার্থবিদ্যা শাখার সভাপতি হন। ১৯৪৫ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৫৮ খ্রিঃ তিনি লন্ডনে রয়‍্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৫৯ খ্রিঃ ভারত সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক রূপে নিয়োজিত করেন। কলিকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'ডক্টর অব সায়েন্স' উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ভারত সরকারের 'পদ্মবিভূষণ' উপাধি লাভ করেন।

শেষকথা: রবীন্দ্রনাথও তাঁর প্রতি স্নেহশীল ও আকৃষ্ট ছিলেন। এমনকি তাঁর একমাত্র বিজ্ঞানগ্রন্থ "বিশ্বপরিচয়' তিনি সত্যেন্দ্রনাথ বসুকেই উৎসর্গ করে বলেছিলেন- " man of genius with a taste for literature and who is a scientist as well"। 

*** বাঙালী চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।

উ:- নব্য ভারতীয় চিত্রকলার জনক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১১৯৫১) তার  চিত্রকলা ও রচনার মধ্যদিয়ে  তুমুল আলোড়ন তুলে, হৈ-চৈ বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন শিশুদের মনোজগতে। 

বাংলার শিল্পকলার ইতিহাসে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে রয়েছে। এই পরিবারের যে কয়েকজন সদস্য চিত্রচর্চায় সুনাম অর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক তথা আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার পথপ্রদর্শক।

চিত্রচর্চা-আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলাচর্চার পুরোধা হলেন অবনীন্দ্রনাথ। পাশ্চাত্য চিত্ররীতির প্রতি আকর্ষণে তিনি বহু খ্যাতনামা শিল্পীর কাছে শিহ্মাগ্রহন করেন।  শিল্পচর্চার প্রথম পর্যায়ে বিদেশি শিল্পীদের কাছে ড্রয়িং, প্যাস্টেল, অয়েল পেন্টিং, জলরং বিবিধ মাধ্যমে চিত্রাঙ্কন শেখেন। এরপর আইরিশ ইল্যুমিনেশন ও মুঘল মিনিয়েচারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ফলে তাঁর শিল্পীসত্তায় নতুনত্ব দেখা দেয়। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে বৈষ্ণব পদাবলিকে বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে তিনি আত্মবিকাশের পথ খুঁজে পান। '

চিত্ররীতির বৈশিষ্ট্য-(১) জলরঙে 'গুয়াশ' পদ্ধতিতে ছবি আঁকার মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাঁর শিল্পচর্চার দক্ষতা। এই 'গুয়াশ' পদ্ধতি জাপানি চিত্রের মত নয়। (২) তাঁর ছবির মূল প্রাণশক্তি ছিল অনুভূতিগ্রাহ্যতা। (৩) তাঁর ছবিতে রয়েছে মুঘল মিনিয়েচরের প্রভাব। (৪) বারবার রঙ ধুয়ে ফেলতেন বলে, তাঁর ছবিতে রঙের চরিত্র হয়ে উঠল মৃদু ও মসৃন। (৫) চিত্রচর্চায় ভারতের ধ্রুপদি ও পৌরাণিক অতীতের প্রতি ঝোঁক তার চিত্রের একটি বৈশিষ্ঠ্য ।

অবনীন্দ্রনাথ পাশ্চাত্য রীতি ত্যাগ করে ভারতীয় ছবি নিয়ে চর্চা শুরু করলেন । রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে মুঘল রীতিতে তিনি এঁকেছিলেন কৃষ্ণলীলা এরপর তিনি আঁকলেন শ্বেত অভিসারিকা ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথের আঁকা অন্তিম শয্যায় শাহজাহান ছবিটি রৌপ্য পদক পায়, বুদ্ধ সুজাতা ইংল্যান্ডের পত্রিকায় প্রশংসা পায় । তাঁর  উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল কালিদাসের ঋতু সংহার বিষয়ে চিত্রকলা শেষ যাত্রা এছাড়াও কচ ও দেবযানী ,ঔরঙ্গজেবের সম্মুখে দাঁড়ার ছিন্ন মুন্ড , ভারতমাতা ,পার্থসারথি, অশোকের রানী ,দেবদাসী ,কাজরি নৃত্য ,বন্দিনী সীতা ইত্যাদি।

*** বাংলা চলচিত্রের ইতিহাসে সত্যজিৎ রায়ের অবদান আলোচনা করো ।

যে বাঙালি চলচ্চিত্রকার আন্তর্জাতিক মহলে বাংলা সিনেমাকে পরিচিতি দিয়েছিলেন, তিনি হলেন সত্যজিৎ রায় (১৯২১- ১৯৯২)। তিনি একইসঙ্গে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সাহিত্যিক, সঙ্গীত পরিচালক এবং গীতিকার। তাঁর হাতে বাংলা সিনেমার নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছিল।


উল্লেখযোগ্য সিনেমা:- সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে 'পথের পাঁচালী' (১৯৫৫)। কান চলচ্চিত্র উৎসবে এই সিনেমাটি 'দ্য বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট' শিরোপা পেয়েছিল। সত্যজিৎ রায়ের 'পথের পাঁচালী', 'অপরাজিত' ও 'অপুর সংসার'- এই তিনটি সিনেমাকে একত্রে অপু ট্রিলজি বলা হয়। তাঁর অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে 'জলসাঘর', 'পরশপাথর', 'চারুলতা', 'কাঞ্চনজঙ্ঘা', 'অরণ্যের দিনরাত্রি', 'অশনি সংকেত', 'জন অরণ্য', 'প্রতিদ্বন্দ্বী' 'তিন কন্যা', 'শতরঞ্জ কে খিলাড়ি', 'ঘরে বাইরে', 'শাখা প্রশাখা', 'নায়ক' ইত্যাদি। এছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি 'গুপী গাইন বাঘা বাইন', 'হীরক রাজার দেশে', 'সোনার কেল্লা', 'জয় বাবা ফেলুনাথ' সিনেমাগুলি এখনো সমান জনপ্রিয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা :- চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অবদানের জন্য সত্যজিৎ রায় বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি, ফ্রান্সের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার লেজিওঁ অফ অনার, ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে এবং বিশ্ব চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার একাডেমি (অস্কার) সম্মানসূচক পুরস্কার। এছাড়া মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাঁকে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করা হয়।

*** বাংলা চলচ্চিত্রে ঋত্বিক ঘটকের অবদান  লেখ ।

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটক এক স্মরণীয় অধ্যায়। সত্যজিৎ রায়ের সমসাময়িক যুগে যারা বাংলা সিনেমা নির্মাণে অনন্যতার বিরল স্বাক্ষর রেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ঋত্বিক ঘটক অগ্রগণ্য।

বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক হলেন ঋত্বিক ঘটক। ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন নিমাই ঘোষের 'ছিন্নমূল' (১৯৫১) সিনেমার মধ্য দিয়ে। এখানে তিনি একই সঙ্গে অভিনয় ও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৫২ সালে তাঁর একক পরিচালনায় মুক্তি পায় 'নাগরিক' সিনেমাটি। সিনেমাটি ১৯৫২ সালে তৈরি হলেও তা যুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৭ সালে। ষাটের দশকে ঋত্বিক ঘটক পরপর তিনটি ছবি বানান 'মেঘে ঢাকা তারা, (১৯৬০), 'কোমল গান্ধার' (১৯৬১), এবং'সুবর্ণরেখা'। এই তিনটি চলচ্চিত্রকে একত্রে 'ট্রিলজি' বা 'ত্রয়ী চলচ্চিত্র' বলা হয়। সিনেমাগুলিতে তৎকালীন দেশভাগের যন্ত্রণা এবং উদ্বাস্তু জীবনের রুঢ় বাস্তবতা চিত্রিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে তাঁর তৈরি 'তিতাস একটি নদীর নাম' এক অবিস্মরণীয় ও মহাকাব্যিক সৃষ্টি। ১৯৭৪ সালে 'যুক্তি-তক্কো আর গপ্পো' নামে তিনি আর একটি সিনেমা তৈরি করেন, এটিই তাঁর পরিচালিত শেষ ছবি।

ঋত্বিক ঘটক মনেপ্রাণে ছিলেন মার্কসীয় আদর্শে বিশ্বাসী। তাই তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র গুলিতে বামপন্থা ও মানবতাকে তিনি কখনোই উপেক্ষা করে যেতে পারেননি। অনেক সমালোচক ঋত্বিক ঘটকের সিনেমায় অতি নাটকীয়তা ও ভারসাম্যহীনতার কথা বললেও আজকের দর্শক জানেন তিনি ছিলেন সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা একজন চিত্র পরিচালক। আবেগ মননে, সংলাপে, দৃশ্যের সংঘর্ষ নির্মাণে তাঁর সিনেমা ছিল অভিনব। তিনি সিনেমার মাঝে মাঝে এমন এমন কিছু কাব্য মুহূর্ত তৈরি করেন, যা দর্শকের মনকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। 


পুরস্কার ও সম্মাননা :-  ১৯৭০ সালে ভারত সরকার তাকে শিল্পকলায় পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন। 'হীরের প্রজাপতি' চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। 'যুক্তি তক্কো আর গপ্পো' চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

No comments:

Post a Comment