6) রাজপুত জাতির উৎপত্তি এবং ভারতের জাতীয় জীবনে তাদের অবদানের কথা উল্লেখ করো ।
উত্তর :- প্রাচীন ভারতে জাতিব্যবস্থার প্রচলনের সূত্রে যেসকল জাতির উদ্ভব ঘটে সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল রাজপুত জাতি । হর্ষবর্ধনের পরবর্তীকালে উত্তর ভারতে সামাজিক মর্যাদার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রাজপুত জাতির উত্থান ভারতের ইতিহাসের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । এইজন্য ৭১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ভারতের ইতিহাসে ‘ রাজপুত যুগ ' বলে অভিহিত করা হয় । এই সময় উত্তর ভারতে প্রতিহার , চৌহান , পারমার , চালুক্য , কলচুরি , শোলাঙ্কি প্রভৃতি বেশ কয়েকটি রাজপুত বংশের উত্থান ঘটে ।
রাজপুত জাতির উৎপত্তি ও বিতর্ক :- ভারতে জাতি হিসেবে রাজপুতদের উত্থান সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে এগুলি হল ।
[ i ] বাণভট্টের মত : হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট বলেছেন যে , উচ্চবংশীয় ক্ষত্রিয় সন্তানরাই ‘ রাজপুত ' নামে পরিচিত । তাঁর মতে , রাজপুতরা ছিলেন সূর্য বা চন্দ্রের বংশজাত ।
[ ii ] অগ্নিকুল তত্ত্ব : ব্রাক্ষ্মণ কবি চাঁদ বরদাই তাঁর ‘ পৃথ্বীরাজ রাসো ' কাব্যে বলেছেন যে , বশিষ্ঠ মুনি মাউন্ট আবু পাহাড়ে চোদ্দো দিন ধরে যজ্ঞ করে বীরের প্রার্থনা করেছিলেন । বশিষ্ঠ মুনির এই যজ্ঞের আগুন থেকেই রাজপুত জাতির উদ্ভব ঘটেছে।
[iii] আর্য জাতি তত্ব:- পণ্ডিত গৌরীশঙ্কর হারাচাদ ওঝা তার " History of Rajputana ' গ্রন্থে অভিমত দিয়েছেন যে , রাজপুতরা হল খাঁটি আর্য জাতির সন্তান । প্রচলিত কিংবদন্তির ওপর ভিত্তি করে পণ্ডিত ওঝা , ভি বৈদ্য প্রমুখ রাজপুতদের সূর্য ও চন্দ্র বংশীয় বলে দাবি করেছেন ।
[ iv ] বিদেশি জাতির বংশধর : ব্রিটিশ ঐতিহাসিক কর্নেল টড তাঁর ' Annals and Antiquities of Rajasthan ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে , শক , হুন , কুষাণ , গুর্জর প্রভৃতি বিদেশি যোদ্ধৃজাতির মানুষ ভারতে অনুপ্রবেশ করে ক্রমে ভারতীয় জনসমাজে মিশে যায় । ভারতীয়দের সঙ্গে এই বিদেশি জাতিগুলির বৈবাহিক সূত্রে মিশ্রণের ফলে রাজপুতনার বিভিন্ন অঞ্চলে সৃষ্টি হয় দুর্ধর্ষ বীর জাতির । এরাই রাজপুত নামে পরিচিত ।
[ v ] মিশ্র জাতি : ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট আর্থার স্মিথ রাজপুতদের মিশ্র জাতি বলে মনে করেন । তিনি বলেছেন ভারতে আগত বিভিন্ন জাতির সাথে ভারতীয় নারীদের সংমিশ্রণের ফলেই রাজপুত জাতির সৃষ্টি হয়েছিল ।
ভারতের ভারতের জাতীয় জীবনে রাজপুতদের অবদান :-
জাতীয় জীবনে রাজপুতদের অবদান ছিল অবিস্মরণীয় । রাজপুতরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল লড়াই করে হিন্দু রাজ্য , হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতিকে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিল । তাদের দুর্জয় সাহস , মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করার মনোভাব এবং রণনৈপুণ্য মুসলমান বিজেতাদেরও মুগ্ধ করেছিল । মোগল সম্রাট আকবর এই শক্তিশালী হিন্দু যোদ্ধৃজাতিকে সৌহার্দ্যগুণে বশ করেন ।
7) প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর প্রবন্ধ রচনা করো ।
উত্তর :- সমগ্র মানবজাতির অর্ধেক অংশ নারীরা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের অঙ্গ । তথাপি গভীরভাবে বিচার করলে বলতে হবে । যে , নারীদের জীবনে অন্ধকার ছেয়ে আছে । প্রাচীন ভারতীয় নারীদের অবস্থানও তার ব্যতিক্রম ছিল না । প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান , বৈদিক সাহিত্য রামায়ণ , মহাভারত , বৌদ্ধ , জৈন সাহিত্য ও বিভিন্ন পর্যটকদের বিবরণ প্রভৃতি থেকে প্রাচীন ভারতে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে যে - সমস্ত তথ্যগুলি পাওয়া যায় , তা হল -
[ i ] হরপ্পা সভ্যতার যুগে নারী :- হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুর মধ্যে নারীমূর্তির প্রাধান্য লক্ষ করে অনেকে হরপ্পা সভ্যতার সমাজব্যবস্থাকে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বলে অভিহিত করেছেন । কিন্তু কৃষি ও বাণিজ্য নির্ভর সমাজব্যবস্থায় পুরুষ - শ্রম প্রাধান্য লাভ করে । নারীরা এখানে সহকারীর ভূমিকা নেয় । তাই স্বাভাবিকভাবে বলা যায় । হরপ্পার সমাজব্যবস্থায় নারীদের অবস্থান ছিল মোটামুটি উঁচুতে ।
[ii ] ঋগবৈদিক সমাজে নারীর অবস্থান :- ঋগ্বৈদিক যুগে পর্যসমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক । এই কারণে সকলেই পুত্রসন্তান কামনা হলেও কন্যাসন্তানকে অবহেলা করা হত না । সমাজে নারীর স্থান ছিল মর্যাদাপূর্ণ । এই যুগে নারীরা স্বামীর সঙ্গে ধর্মীয় কাজে অংশ নিত । সহধর্মিনী হিসেবে সমাজে তারা যথেষ্ট সুখভোগ করত । সতীদাহ প্রথা ও বাল্যবিবাহ বিশেষ প্রচলিত ছিল না । এই যুগে মেয়েরা অস্ত্রচালনা , সাহিত্যচর্চাও করত । উচ্চশিক্ষা ও শাস্ত্রচর্চায় এ যুগে অনেক নারী ( অপালা , ঘোষা , বিশ্ববারা ) উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন ।
[ iii ] মৌর্য যুগে নারীর অবস্থান :- মৌর্য যুগে নারীরা আবার স্বাধীনতা , মর্যাদা ফিরে পায় । এ যুগে নারীদের অবস্থা যথেষ্ট উন্নত ছিল । সামরিক ক্ষেত্রেও তারা যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছিলেন । এ যুগে নাবালক পুত্রদের হয়ে রাজমহিষীদের রাজকার্য পরিচালনারও অনেক দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় । কৌটিল্যের রচিত ‘ অর্থশাস্ত্র ’ থেকে জানা যায় যে , এযুগে বহুবিবাহ , বিধবাবিবাহ , বিবাহবিচ্ছেদ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতীদাহ প্রথারও প্রচলন ছিল । নারীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার স্বীকৃত ছিল । নারীদের বিদ্যার্জনের সুযোগও এ যুগে ছিল ।
[ iv ] কুষাণ যুগে নারীর অবস্থান:- কুষাণ যুগে নারীর স্থান বৈদিক যুগের থেকে উন্নত ছিল । আইনের চোখে এইসময়ে নারীর স্থান ছিল পুরুষের পরে । উচ্চশ্রেণির নারীদের শিক্ষার সুযোগও ছিল । এ যুগে সাধারণ মানুষের একজন স্ত্রী থাকলেও রাজা ও ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল ।
[ v ] গুপ্ত যুগে নারীর অবস্থান : এযুগেও নারীদের স্বাধীনতা ছিল । নারীদের প্রধান দায়িত্ব ছিল অবশ্য বিবাহ , স্বামী সেবা ও সন্তান পালন । তবে তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল । অনেকে বিভিন্ন কাব্য ও নাটকও রচনা করেছিল । এ ছাড়া সংগীত , চিত্রশিল্প প্রভৃতিতে তারা দক্ষ ছিল ।
উপসংহার :- বস্তুত সমাজে নারীদের অবস্থান বারে বারে পরিবর্তিত হয়েছে। তবে সমাজের উন্নতিতে নারীদের অবদান অস্বীকার করা যায় না।
8) প্রাচীন মিশরের নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রার কার্যাবলির পরিচয় দাও ।
উত্তর:- প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু নারীর আবির্ভাব ঘটেছিল যাঁরা নিজেদের সৌন্দর্যের জন্য খ্যাতিলাভ করেছেন । আবার এমন অনেক নারী ছিলেন যাঁরা দেশ পরিচালনায় পুরুষ শাসকদের থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলেন না । এমন - ই একটি উদাহরণ হল মিশরের ফ্যারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ - এর মহিষী নেফারতিতি ।
নেফারতিতির কার্যাবলি : - নেফারতিতির পূর্বপরিচয় নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সকলেই এ কথা স্বীকার করেছেন যে , তিনি তাঁর স্বামীর সাহচর্যে থেকে মিশরের প্রশাসন , রাজনীতি ও ধর্মীয় বিষয়ে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন ।
[ i ] কর্তৃত্বপরায়ণতা : সমকালীন বিভিন্ন ভাস্কর্যে নেফারতিতিকে একজন শক্তিশালী ও কর্তৃত্বপরায়ণা নারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে । সেখানে দেখা যায় নেফারতিতি দেবতা আটেনের পুজো পরিচালনা করছেন ; রথ চালাচ্ছেন , শত্রুকে প্রতিহত করছেন ইত্যাদি ।
[ ii ] শাসন পরিচালনা : নেফারতিতি স্বামী আখেনাতেনের ( চতুর্থ আমেনহোটেপ ) সহকারী শাসিকা হিসেবে ১৩৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মিশরে শাসন পরিচালনা করেন । এই কালপর্বে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তনে তিনি স্বামীর সাফল্যের অংশীদার ছিলেন ।
[ iii ] রাষ্ট্রীয় জীবনে পরিবর্তন প্রশাসনে স্বামীর সঙ্গে সহাবস্থান করে নেফারতিতি মিশরের ধর্মীয় জীবন , রীতিনীতি , রাজকীয় পোশাক প্রভৃতি বিষয়ে যথেষ্ট পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
[ iv ] ক্ষমতা দখলের প্রয়াস : পুত্রসন্তানহীনা নেফারতিতি মোট ছয় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন । তাই চতুর্থ আমেনহোটেপের পর সিংহাসনে নিজ কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠার জন্য ফ্যারাও এর পুত্র তুতেনখামেন - এর সাথে নিজের তৃতীয় কন্যা আঁখেসিনপাটেন - এর বিবাহ দেন ।
ক্লিওপেট্রা : প্রাচীন বিশ্বের ইতিহাসে বিরল যে কয়েকজন নারী নিজ প্রতিভাগুণে কিংবদন্তির পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেন , তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মিশরের টলেমি বংশের শেষ শাসক সপ্তম ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটর । যিনি শুধু ক্লিওপেট্রা নামেই ইতিহাসে সমধিক প্রসিদ্ধ ।
সিংহাসন লাভ : ৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মার্চ মাসে পিতার মৃত্যুর পর ১৮ বছর বয়স্ক ক্লিওপেট্রা এবং ১০ বছর বয়স্ক টলেমি ( ১৩ ) মিশরের যুগ্ম শাসক হন । নীলনদের অপর্যাপ্ত বন্যা , দুর্ভিক্ষ , আর্থিক সংকট ও রাজনৈতিক সংঘর্ষের জন্য তাঁদের রাজত্বের প্রথম তিন বছর সমস্যাসংকুল ছিল । যদিও মিশরীয় রীতি অনুসারে ক্লিওপেট্রা তাঁর ছোটোভাই টলেমি ( ১৩ ) -কে বিবাহ করেন কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগিতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না । খ্রিস্টপূর্ব ৫১ অব্দের শেষের দিকে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায় । তখন তিনি সরকারি সমস্ত নথিপত্র থেকে টলেমির নাম মুছে ফেলার ব্যবস্থা করেন ।
জুলিয়াস সিজারের বন্ধুত্ব লাভ – বিবাহ : এই সময়ে রোমে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে জুলিয়াস সিজারের প্রতিদ্বন্দ্বী পম্পে মিশরে আশ্রয় নেয় । মিশররাজ টলেমি ( ১৩ ) তাকে প্রথম আশ্রয় দিলে পরে সিজারের ভয়ে ভীত হয়ে তাকে হত্যা করেন । এই সময় মিশরে নিজ ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য ক্লিওপেট্রা সিজারের সাথে দেখা করেন । ২১ বছরের যুবতি ক্লিয়োপেট্রার রূপলাবণ্যে মুগ্ধ সিজার এঁকে বিবাহ করেন এবং নীলনদের যুদ্ধে ত্রয়োদশ টলেমিকে হত্যা করে ক্লিওপেট্রাকে মিশরের শাসক করেন ।
অ্যান্টনি - ক্লিওপেট্রা বিবাহ : ব্লুটাস নামে এক আততায়ীর হাতে সিজার নিহত ( ৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ) হওয়ার তিন বছর পর রোমান সেনাপতি মার্ক অ্যান্টনি মিশর অভিযানে আসেন । কিন্তু তিনি শীঘ্রই রানি ক্লিওপেট্রার প্রেমে পড়ে যান । অ্যান্টনি মিশরের সিংহাসন লাভের উদ্দেশ্যে ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ করেন ।
অ্যাক্টিয়ামের যুদ্ধ : কিন্তু অ্যান্টনি ইতিপূর্বে বিবাহিত ছিলেন । তাঁর স্ত্রী ছিলেন রোমান শাসক অক্টাভিয়াস সিজারের বোন । এই কারণে অক্টাভিয়াস ক্রুদ্ধ হয়ে মিশর আক্রমণ করেন । ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টনির মিলিত বাহিনী শীঘ্রই অ্যাক্টিয়ামের যুদ্ধে অক্টাভিয়াসের মুখোমুখি হয় । এই যুদ্ধে ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টনি চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন । এর ফলে মিশরের স্বাধীনতা লুপ্ত হয় এবং মিশর রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয় ।
9) ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান ।
উত্তর ) ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পুরোহিত , নতুন চিন্তার পুরোধা , কর্মযজ্ঞের হোতা ছিলেন জার্মানির উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক মার্টিন লুথার ।
[ i ] প্রথম জীবন : মার্টিন লুথার জার্মানির এরফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভের পর ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসী সংঘে যোগদান করেন । পরের বছর তিনি উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন । ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রোম ভ্রমণের সময় পোপ ও কার্ডিনালদের দুর্নীতি দেখে হতাশ হন এবং জার্মানিতে ফিরে এসে রোমান চার্চের অন্যায়ের সমালোচনা শুরু করেন ।
[ ii ] ইনডালজেন্স বিক্রির প্রতিবাদ:- রোমে সেন্ট পিটার গির্জা সংস্কারের কাজ শুরু হলে এর প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পোপ দশম লিও - র প্রতিনিধি টেট্জেল ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে আসে । তিনি প্রচার করেন যে , পোপের স্বাক্ষরিত ‘ ক্ষমাপত্র ' বা ইনডালজেন্স ' ক্রয় করলে মানুষের সকল পাপ মুক্ত হবে এবং সে স্বর্গলাভ করবে । জার্মানিতে এই মার্জনাপত্র বিক্রি শুরু হলে মার্টিন লুথার চার্চের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান । মার্টিন লুথার প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন মার্জনা পত্র বিক্রি আসলে পোপের একটি প্রতারণা ।
[iii] ৯৫ দফা থিসিস:- ধর্মের নামে এই অনাচারের প্রতিবাদে লুথার ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১ অক্টোবর ক্ষমাপত্র ও চার্চের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৯৫ দফা অভিযোগপত্র উইটেনবার্গ গির্জার দরজায় টাঙিয়ে দেন । এটি ৯৫ থিসিস নামে পরিচিত । লুথারের ‘৯৫ থিসিস ’ - এর প্রশ্নগুলি জার্মানির সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে ।
[iv ] বিভিন্ন প্রন্থ রচনা:- মার্টিন লুথার তাঁর মতবাদ প্রচারের সপক্ষে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন । এগুলির মধ্যে অন্যতম হল , ' On the Babylonian Captivity on the Church of God ' এবং ‘ On the Freedom of a Christian Man ' এই গ্রন্থ দুটিতে তিনি পোপের প্রাধান্যকে অস্বীকার করার পাশাপাশি ক্যাথোলিক চার্চের কয়েকটি নীতির বিরোধিতা করেন ।
[ v ] লুথারের সমর্থন বৃদ্ধি : পোপ - বিরোধী ধর্মীয় মতবাদ প্রচারের ফলে ইতিমধ্যে ক্যাথোলিক ধর্ম ছেড়ে বহু জার্মান সামন্ত রাজা ও সাধারণ মানুষ লুথারের অনুগামী ও সমর্থকে পরিণত হল । জার্মানির প্রাশিয়া , স্যাক্সনি , ব্রান্ডেনবার্গ , হেস , লুক্সেমবার্গ প্রভৃতি অঞ্চলে লুথারের মতবাদের ব্যাপক প্রসার ঘটে ।
[ vi ] বিদ্রোহ : লুথার ও পোপকে সমর্থনের প্রশ্নে জার্মানিতে গৃহযুদ্ধ বেধে যায় । কৃষকরা লুথারের সমর্থনে ১৫২৪-১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে জঙ্গি আন্দোলন শুরু করে । তারা ক্যাথোলিক চার্চের সম্পত্তি নষ্ট করে এবং বহু মানুষকে হত্যা করে । শহরের শ্রমিক শ্রেণিও কৃষকদের সঙ্গে বিদ্রোহে যোগ দেয় ।
[ vii ] বিদ্রোহ দমন সম্পত্তি ধ্বংসের ফলে জার্মান সম্রাট ও পোপপন্থী সামন্তপ্রভুরা শীঘ্রই কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন করেন । গৃহযুদ্ধ চলাকালেই লুথারের মৃত্যু হয় ( ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দ ) ।
[ viii ] অগসবার্গের সন্ধি : শেষপর্যন্ত ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ অগস্বার্গের সন্ধি ' - র দ্বারা জার্মানিতে গৃহযুদ্ধের অবসান হয় । সন্ধি অনুসারে ‘ রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম ' বলে স্বীকার করে নেওয়া হয় । ফলে উত্তর জার্মানির অধিকাংশ অঞ্চলে লুথার প্রবর্তিত ‘ লুথারবাদ ' প্রতিষ্ঠিত হয় ।
10) ইক্তা প্রথা কী ? ইক্তা প্রথার উদ্ভব ও তার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো ।
উত্তর : দিল্লির সুলতানি শাসনকালে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসে বহুচর্চিত বিষয় ইক্তা প্রথা । ইক্তা ( Iqta ) হল একটি আরবি শব্দ যার আক্ষরিক অর্থ ‘ এলাকা ’ ; অন্য অর্থ ‘ অংশ বা ভাগ ’ । সুলতানি সাম্রাজ্যের অঞ্চলগুলিকে সামরিক শাসকদের হাতে বণ্টন করার পদ্ধতিকে বলা হয় ইক্তা ব্যবস্থা ।
ইক্তাদারদের কর্তব্য : যুগে সুলতানের অধীনে দু - ধরনের জমি থাকত : ।
[ ১ ] খালিসা জমি : এই ধরনের জমি থেকে সরকার , সরকারি রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে কর সংগ্রহ করতেন এবং এই অর্থ সবটাই রাজকোশে জমা হত ।
[ ২ ] খালিসা বহির্ভূত জমি : এই জমি সুলতান কতগুলি শর্তের বা দায়িত্ব - কর্তব্যের বিনিময়ে তাঁর অভিজাতবর্গ বা সৈন্যাধ্যক্ষের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন । এই দ্বিতীয় ধরনের জমি হল ইক্তা । ইক্তার প্রাপককে ‘ ইত্তাদার ’ বা ‘ মাকৃতি ' বলা হত । কোনো কোনো সময়ে তাদের ‘ ওয়ালি ’ বা ‘ উলিয়াৎ ’ নামেও অভিহিত করা হত ।
ইত্তা প্রথা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য : ভারতে ইক্তা প্রথা প্রবর্তন করে সুলতানরা তাদের কয়েকটি উদ্দেশ্যসাধন করতে চেয়েছেন । যেমন :
( ১ ) ভারতে সুলতানি অধিকৃত এলাকাগুলির ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকারী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা ।
(২) আমির - ওমরাহদের সন্তুষ্ট করে সাম্রাজ্যের বিদ্রোহের আশঙ্কা দূরীভূত করা ।
( ৩) রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা । ও নতুন নতুন বিজিত অঞ্চলগুলি থেকে রাজস্ব আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল । এই অনিশ্চয়তা দূরীকরণের লক্ষ্যে ইক্তাদারদের নিয়োগ করা হয় ।
ইক্তা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য : ইক্তাদার ব্যবস্থা ছিল সুলতানি যুগের একটি আর্থরাজনৈতিক ব্যবস্থা । একাদশ শতকে তুর্কি | ঐতিহাসিক নিজাম - উল - তুসির লেখা “ সিয়াসনামা ' গ্রন্থ থেকে ইক্তা ব্যবস্থার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য জানা যায় । যেমন -
(1) ইক্তা গ্রহণকারীরা ইক্তাদার বা মুক্তি নামে পরিচিত ছিলেন ।
(২) ইস্তাদাররা কৃষকদের কাছ থেকে নিয়মিত রাজস্ব সংগ্রহ করতেন ।
(৩ ) কৃষকরা রাজস্ব শোধ করলে তাদের জীবন , পরিবার ও সম্পত্তির ওপর ইক্তাদারদের আর কোনো অধিকার থাকত না ।
( ৪) ইক্তার আয় থেকে ইস্তাদারকে একদল সৈন্যবাহিনী রাখতে হত । প্রয়োজনের সময় সুলতানকে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে হত ।
গুরুত্ব : সুলতানি যুগে ভারতে ইক্তা প্রথা প্রবর্তনের গুরুত্ব ছিল সুদূরপ্রসারী । যেমন :
১) ইক্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে দিল্লির সুলতানগণ ভারতে নতুন নতুন অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন । ফলে সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটে ।
২) ইক্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজধানী দিল্লি থেকে সুলতানি সাম্রাজ্যের দূরবর্তী অঞ্চলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল । ফলে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছিল ।
৩ ) বিভিন্ন অভিজাত ও আমির - ওমরাহদের ইক্তা প্রদান করে দিল্লির সুলতানগণ তাদের অসন্তোষ দূর করতে সক্ষম হন ।
8) ইক্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে দিল্লির সুলতানগণ প্রশাসনের বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি দূর করে শাসনব্যবস্থায় উৎকর্ষ আনেন । ইক্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব রাজকোশে জমা পড়ে এবং সুলতানের আর্থিক শক্তি বৃদ্ধি পায় ।
11) মধ্যযুগের ইউরোপে গিল্ডের প্রতিষ্ঠার পশ্চাতে কারণগুলি উল্লেখ করো । ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতিতে গিল্ডের প্রধান কাজগুলি লেখো ।
উত্তর:- মধ্যযুগের ইউরোপে ব্যাবসাবাণিজ্যের অগ্রগতির সাথে সাথে অর্থনৈতিক , সামাজিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে যেমন একাধিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তেমনি ব্যাবসাবাণিজ্য ও বণিকদের স্বার্থরক্ষার স্বার্থে একাধিক সংগঠনেরও আবির্ভাব ঘটেছিল । বণিকদের নিয়ে তৈরি এরূপ একটি সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ' গিল্ড ’ ( Guild ) বা ' বণিক সংঘ ' ( Merchant Guild ) | আনুমানিক নবম শতকে ফ্রাঙ্ক ( বর্তমান ফ্রান্স ) এ বণিকদের সংগঠনের সূত্রপাত হয়েছিল ।
ইউরোপে গিল্ড প্রতিষ্ঠার কারণসমূহ :
মধ্যযুগের ইউরোপে ব্যাবসাবাণিজের দ্রুত প্রসারের সাথে সাথে নানান সময়ে একাধিক সমস্যা বাণিজ্যের অগ্রগতির প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে উঠেছিল । একারণে তারা একটি শক্তিশালী ব্যবসায়ীকে সংগঠনের কামনা করেছিলেন । এরই ফলশ্রুতি ছিল ' গিল্ড ' ( Guild ) বা ' বাণিজ্যিক সংগঠনের আবির্ভাব । এ ছাড়া গিল্ডের উদ্ভবের পশ্চাতে একাধিক কারণ বিদ্যমান । এগুলি হল --
[ i ] ঝুঁকিহীন বাণিজ্যিক স্বার্থে : ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক স্বার্থকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা কামনা করেছিলেন । বাণিজ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও অনিশ্চয়তা দূরীভূত করণের জন্য তারা একে স্বাগত জানিয়ে ছিলেন । কারণ মধ্যযুগের ইউরোপে বণিকশ্রেণি ও ব্যবসায়ীরা প্রতিমুহূর্তে ঝুঁকি নিয়েই বাণিজ্য করতেন ।
[ ii ] সুনির্দিষ্ট বিধি বা আইনের স্বার্থে:- সমগ্র ইউরোপজুড়ে কোনো বিশেষ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল না যারা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সকলের স্বার্থকে সুরক্ষিত করে ব্যাবসাবাণিজ্য করবে । বিচ্ছিন্নভাবে চলা এই অর্থনৈতিক লেনদেন প্রক্রিয়ার ইতি ঘটাতেই গিল্ড ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল ।
[ iii ] বেআইনি কর সংগ্রহের রোধের স্বার্থে:- সামন্তপ্রভুরা মাঝেমধ্যেই বণিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করে নিতেন । অতিরিক্ত করের বোঝা বণিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ায় ব্যাবসা ক্ষেত্রে চরম বিপাকে কোনো কোনো বণিক বা ব্যবসায়ীকে পড়তে হত । এরূপ সমস্যা সমাধানকল্পে গিল্ডের আবির্ভাব ঘটেছিল ।
[ iv ] ব্যাবসাবাণিজ্যে উন্নতির স্বার্থে : গিল্ড গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ ছিল ইউরোপের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটানো । বণিকরা যে কোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান সূত্র গিল্ডের কাছ থেকে যাতে সহজেই পায় তা দেখা হত ।
গিল্ডের কার্যকলাপ :-
১ ] প্রতিটি বণিক যাতে নিজ অঞ্চলে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে তা সুনিশ্চিত করা ।
২ ] বাণিজ্যিক গতিকে অব্যাহত রাখতে নতুন নতুন আইন প্রবর্তন করা ।
৩ ] উৎপাদিত পণ্যের মান বজায় রাখা ।
৪ ] নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান ঘটানো ।
৫ ] বাণিজ্যিক স্বার্থে বিভিন্ন প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা ।
৬ ] বণিকদের যে - কোনো সমস্যার সমাধান করা ।
৭ ] সামাজিক , অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিগত বিভিন্ন কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করা ।
৮ ] বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা ।
৯ ] সদস্যদের আর্থিক সাহায্য দান করা ।
১০ ] উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখা প্রভৃতি অন্যতম কাজ ।
12) কীভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আদিম মানুষ শিকারি খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয় ?
উত্তর ) সূচনা : আদিম মানুষের জীবনযাত্রা ছিল খুবই কষ্টকর । তারা খাদ্য উৎপাদন করতে পারত না । প্রকৃতি থেকে তাদের খাবার সংগ্রহ করতে হত । ক্রমে তারা অবশ্য শিকার করতে শিখেছিল । তারা বনে - জঙ্গলে , পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত । মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষ হাতিয়ার নির্মাণ , খাদ্যাভ্যাস , বসতি ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিছু কিছু উন্নতি করেছিল । তবে তখনও মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক । নব্য প্রস্তর যুগে এসে মানুষের জীবনযাত্রার চরিত্র অনেকটাই পালটে যায় । মানুষ এই পর্যায়ে খাদ্য সংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয় ।
[ ১ ] খাদ্য সংগ্রাহক । প্রথম অবস্থায় আদি মানুষ ছিল প্রকৃতির পরগাছার মতো । তারা প্রকৃতি থেকে খাবার সংগ্রহ করত । গাছের ফলমূল , শাক - পাতা , শেকড় - বাকড় প্রভৃতি এবং কাঠবিড়ালী , ইঁদুরের মতো ছোটো ছোটো প্রাণীই ছিল আদি মানবের প্রধান খাদ্য ।
[ ২ ] শিকারি মানুষ : শিকারী মানুষও এক অর্থে খাদ্য সংগ্রাহক ছিল । কারণ তারা প্রকৃতি থেকে পাওয়া জীবজন্তু শিকার করত । এর জন্য শিকারি মানুষ উন্নতমানের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত পশুহত্যার জন্য যা অনেক বেশি কার্যকারী । তা ছাড়া তারা ছোটো ছোটো প্রাণীও বধ করত । শিকারি মানুষরা যেসব হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করত তার অনেক নিদর্শন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আবিষ্কৃত হয়েছে । তাদের হাতিয়ারের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল পাথর কেটে ছেঁটে ধারালো এবং ছুঁচোলো করা । পাথর ছাড়া পশুর হাড় এবং হাতির দাঁত দিয়েও তারা শিকারের অস্ত্র তৈরি করত ।
[ ৫ ] বাসগৃহ নির্মাণ : শিকারি মানুষরা প্রথম দিকে গুহায় বসবাস করলেও পরবর্তীকালে তারা বসবাসের প্রয়োজনে ঘর তৈরি করতে শিখেছিল । তারা ডালপালা , জন্তু - জানোয়ারের হাড় , লতাপাতা , মাটি প্রভৃতি দিয়ে ঘর তৈরি করে তার ওপর চামড়ার আচ্ছাদন দিত । চেকোশ্লোভাকিয়ার আদিম শিকারি মানুষের এরূপ আস্তানার নিদর্শন মিলেছে ।
উপসংহার : পৃথিবীতে শিকারি মানবসমাজের উদ্ভবের পর থেকে তা অন্তত ১০ লক্ষ বছর স্থায়ী হয়েছিল । এই সময় কালের মধ্যে শিকারি মানুষ ধীরে ধীরে পশুশিকার ছাড়াও পশুপালন , উন্নত হাতিয়ার নির্মাণ , বাসগৃহ নির্মাণ , আগুনের ব্যবহার , মৃৎপাত্র ব্যবহার , জলযানের ব্যবহার ইত্যাদির মধ্য দিয়ে নিজেদের উন্নত করে । সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম বা সপ্তম সহস্রাব্দে মানুষ খাদ্যসংগ্রহ ও পশুপালনের পর্ব অতিক্রম করে খাদ্যোৎপাদকের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ।
No comments:
Post a Comment