B.A HISTORY HONOURS
5TH SEMESTER , CBPBU
1. Who painted ´Last Judgement´ ? [কে শেষ বিচার চিত্রটি আকেন ? ]
Answer:- মিকেলাঞ্জেলো Last Judgement বা শেষ বিচার চিত্রটি আকেন।
2. Who wrote 'Decameron' ? [ কে ডেকামেরন গ্রন্থটি রচনা করেন ? ]
Answer :- Decameron (ডেকামেরন) গ্রন্থটি রচনা করেন বোকাচ্চিও।
3. Who discovered the printing machine ? [কে মুদ্রনযন্ত্র আবিস্কার করেন ? ]
Answer :- জোহানেস গুটেনবার্গ মুদ্রনযন্ত্র আবিস্কার করেন ।
4. Who wrote 'Divine comedy ' ? [ কে ডিভাইন কমেডি গ্রন্থটি রচনা করেন ? ]
Answer :- Divine Comedy (ডিভাইন কমেডি ) গ্রন্থটি রচনা করেন দান্তে।
5. Who painted ´Last Supper ´ ? [কে শেষ নৈশভোজ চিত্রটি আকেন ? ]
Answer:- লিওনাদো দা ভিঞ্চি Last Supper বা শেষ নৈশভোজ চিত্রটি আকেন।
6. Who painted ´Monalisha ´ ? [কে মোনালিসা চিত্রটি আকেন ? ]
Answer:- লিওনাদো দা ভিঞ্চি Monalisha বা মোনালিসা চিত্রটি আকেন।
7. Who painted ´Virgin of Rocks ´ ? [কে ভার্জিন অব রোকস চিত্রটি আকেন ? ]
Answer:- লিওনাদো দা ভিঞ্চি virgin of Rocks চিত্রটি আকেন।
8. Who painted ´ Transfiguration ' ? [কে ট্রান্সফিগারেশন চিত্রটি আকেন ? ]
Answer:- রাফায়েল Transfiguration চিত্রটি আকেন।
9. Who wrote ' The Canterbury Tales ' ? [ কে ক্যান্টারবেরী গ্রন্থটি রচনা করেন ? ]
Answer :- The Canterbury Tales গ্রন্থটি রচনা করেন চসার।
10. Who wrote ' The house of Fame ' ? [ কে The house of Fame গ্রন্থটি রচনা করেন ? ]
Answer :- The house of Fame গ্রন্থটি রচনা করেন চসার।
11. Who wrote ' Hamlet, king Lear , otello , Julias Ceaser, The cmedy of error ' ?
Answer :- গ্রন্থটি রচনা করেন উইলিয়াম সেক্সপিয়ার ।
12. Who wrote ' The Faery Queen ' ? [ কে The Faery Queen গ্রন্থটি রচনা করেন ? ]
Answer :- The Faery Queen গ্রন্থটি রচনা করেন স্পেন্সার।
13. What was ' Inquisition' ? [ইনকুইজিশন কী ? ]
Answer :- ইনকুইজিশন বলতে মধ্যযুগের ক্যাথলিক চার্চের অধীনে কিছু প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যারা ক্যাথলিক বিরোধী চিন্তাধারাকে দমন করার কাজে লিপ্ত ছিল।
14. What is Indulgence ? [ ইন্ডালজেন্স বা পাপমুক্তি পত্র কী ? ]
Answer :- Indulgence বা পাপমুক্তি পত্র হল একধরনের ব্যবস্থা যাতে অর্থের বিনিময়ে এই মার্জনাপত্র কেনা যেত। পোপ দশম লিও ( Leo ) রোমের সেন্ট পিটার চার্চ নতুন করে নির্মাণ করার জন্য indulgence বা পাপমুক্তিপত্র বিক্রয় করে অর্থ সংগ্রহ করতে ব্রতী হন ।
1. What do you mean by the term ' Scientific Revolution " ? How did it originate in the 16th century ? (বৈজ্ঞানিক বিপ্লব' শব্দটি দ্বারা আপনি কী বোঝেন? ষোড়শ শতাব্দীতে কীভাবে এর উৎপত্তি হয়েছিল?)
Answer :- বৈজ্ঞানিক বিপ্লব' কী?
বিপ্লব বলতে মূলত বোঝায় মৌলিক পরিবর্তন । বিজ্ঞান বিপ্লবের ক্ষেত্রে সেই পরিবর্তন হল মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বিজ্ঞানচর্চার অবসান । আগেকার ধর্মাশ্রয়ী বিজ্ঞানচর্চার বদলে শুরু হল যুক্তিভিত্তিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ধর্মনিরপেক্ষ এক মানসিকতা । মানুষ চেষ্টা করল প্রকৃতির শাশ্বত নিয়মগুলিকে জেনে বা আবিষ্কার করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে । এইভাবে বিজ্ঞান বিপ্লব এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয় ।
বিজ্ঞান বিপ্লবের কালপর্ব:-
বিজ্ঞানচর্চায় নতুন দর্শন ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন এসেছিল তিনটি ধাপে , যার ভিত্তিতে জে . ডি . বার্নাল বিজ্ঞান বিপ্লবের কালকে তিনটি পর্বে বিভক্ত করেছেন-
( ১ ) ১৪৪০–১৫৪০ ;
( ২ ) ১৫৪০-১৬৫০
( ৩ ) ১৬৫০–১৬৯০ ।
লিওনাদো দা ভিঞ্চি :-
বহুমুখী প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন দ্য ভিঞ্চি। অধিকাংশ মানুষ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘মোনালিসা’ এবং ‘দ্য লাস্ট সাপার' এর জন্যেই উনাকে চেনেন। কিন্তু তিনি ছিলেন একাধারে একজন চিত্রশিল্পী, বিজ্ঞানী, স্থপতি, দার্শনিক, উদ্ভাবক, প্রকৃতিবিদ, শারীরতত্ত্ববিদ, ভূতত্ত্ববিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, মানচিত্রকর এবং সংগীতজ্ঞ। ছোটবেলা থেকেই লিওনার্দোর ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল।
তাঁর বিখ্যাত নোটবই হচ্ছে জ্ঞানের খনি । এখানে পাঁচ হাজারের মতো যন্ত্র , পশু ও মানুষের অ্যানাটমি ও ফলের রেখাচিত্র পাওয়া গেছে । তিনি কল্পনা করেছিলেন এমন এক যন্ত্রের , যার সাহায্যে মানুষ আকাশে উড়তে পারবে । শিল্পচর্চার ক্ষেত্রেও তাই তিনি গ্রিক ও রোমান ঐতিহ্যকে অনুকরণ করতে চাননি । অসাধারণ যেসব ছবি তিনি এঁকেছেন তার মধ্যে রয়েছে " Virgin of the Rocks " Virgin and Child With St. Anne and a Lamb " " Portrait of a lady with an Ermine " ইত্যাদি । কিন্তু যে দুটি ছবির জন্য তিনি পৃথিবীবিখ্যাত , তাহল " মোনালিসা ” ও “ শেষ নৈশভোজ " ( Last Supper শেষ নৈশভোজ " ছবিটি আঁকা হয় ১৪৯৭ সালে ।
ফ্রান্সিস বেকন:-
স্যার ফ্রান্সিস বেকন একাধারে একজন ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কূটনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক। আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও তিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের প্রবক্তা হিসেবে সুখ্যাত হন।
কোপারনিকাস:-
কোপারনিকাস ছিলেন একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনিই সর্বপ্রথম আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ প্রদান করেন। যেখানে তিনি পৃথিবী নয়; বরং সূর্যকে সৌরজগতের মূলকেন্দ্র হিসাবে উল্লেখ করেন।
গ্যালেলিও:-
নিউটন :-
আইজ্যাক নিউটন (Isaac Newton) ছিলেন প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী। বিজ্ঞান বিপ্লবকে গৌরবের চরম শিখরে উন্নীত করেন বিখ্যাত ইংরেজ বৈজ্ঞানিক স্যার আইজ্যাক নিউটন । অল্প বয়সে ছাত্রজীবনেই তাঁর প্রতিভার প্রকাশ ঘটেছিল । এই সময়ে তিনি জলঘড়ি ও পাথরের সূর্যঘড়ি নির্মাণ করেন । কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি বিখ্যাত অধ্যাপক আইজ্যাক বারোর ( Isaac Barrow ) সংস্পর্শে আসেন । পরে তাঁরই স্থলাভিষিক্ত হয়ে নিউটন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন । কেমব্রিজে তিনি যেসব বিষয়ের চর্চা করতেন , তার মধ্যে ছিল আলোকবিদ্যা , পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন শাখাপ্রশাখা রসায়ন ইত্যাদি । তিনি বলবিজ্ঞান ( mechanics ) ও জলগতিবিজ্ঞানের ( Hydrodynamics ) সমস্যার সমাধান করতে পেরেছিলেন।নিউটন তাঁর অভিকর্ষ ও গতিতত্ত্ব ব্যাখ্যা করে ১৬৮৭ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “ De Philosophic Naturalis Principia Mathematica ” প্রকাশ করেন । গ্রন্থটি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত ।
2. Write a note on the origins of enlightenment during the period of your study . (আপনার অধ্যয়নের সময়কালে জ্ঞানাদীপ্তির উৎস সম্পর্কে একটি নোট লিখুন। )
Answer:-
জ্ঞানদীপ্তি কী?
মধ্যযুগে চিন্তাজগৎ আচ্ছন্ন করেছিল খ্রিস্টধর্ম । চার্চ ছিল সব কিছুর নিয়ন্ত্রক । আধুনিক যুগের সূচনায় রেনেসাস জন্ম দিল মানবতাবাদের । বিকশিত হল মানবতাবাদের আদর্শ , সবার উপরে মানুষ সত্য । ষোড়শ শতক ও সপ্তদশ শতকের গোড়ায় পশ্চিম ইউরোপে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ের সমালোচনা। কিন্তু সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয় পর্বে মানুষ এইসব ধর্মের অতিপ্রাকৃতিক ( supernatural religion ) জগৎ থেকে মুক্ত হয়ে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের চর্চায় মনোযোগী হয় । এর ফলে মনোজগতে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হল , এক কথায় তাকেই আমর বলি জ্ঞানদীপ্তি ( enlightenment ) । একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্ঞানদীপ্তিই ছিল ইউরোপের চিন্তাজগতের মূল বৈশিষ্ট্য । বস্তুত , সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এর সূচনা হলেও ফরাসি দার্শনিকদের হাত ধরে জ্ঞানদীপ্তির পরিপূর্ণ বিকাশ হয়েছিল অষ্টাদশ শতকে ।
জ্ঞানদীপ্তি বলতে আমরা বুঝি চিন্তার বন্ধনমুক্তি ; অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের পরিবর্তে যুক্তির প্রয়োগ । মধ্যযুগে চাৰ্চ শিখিয়েছিল ধর্মীয় অনুশাসনের কাছে মানসিক আত্মসমর্পণ । যুক্তিভিত্তিক সমালোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণই খুলে দেয় মানুষের মনের বন্ধ দুয়ার , দুর করে অজ্ঞতার অন্ধকার । জ্ঞানদীপ্তি মানুষকে এইসব শিক্ষাই দিয়েছিল । এর ফলে মানুষের মন হয়েছিল সন্দেহপ্রবণ । অর্থাৎ বিনা বিচারে ও বিশ্লেষণে মানুষ কোনো কিছুই গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল না । তার দৃষ্টিভঙ্গি হয়েছিল বিজ্ঞানমনস্ত ও চিন্তাশীল ।
জ্ঞানদীপ্তির বিকাশে বিজ্ঞানের ভুমিকা:-
বিজ্ঞানের হাত ধরেই জ্ঞানদীপ্তির বিকাশ শুরু হয়। আধুনিক যুগের সুচনায় কোপারনিকাস, গ্যালেলিও , হারভে প্রমুখ বিজ্ঞান বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করেছিল। বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি। টরিচিলির ব্যারোমিটার আবিস্কার , ফারেনহাইট এর থার্মোমিটার আবিস্কার জ্ঞানদীপ্তির বিকাশে সহায়ক হয়েছিল।
অষ্টাদশ শতকে বিজ্ঞানচর্চা ও যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানুষের ভাবজগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত করেছিল । প্রকৃতির রহস্য মানুষের কাছে উন্মোচিত হচ্ছিল । এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল যে , প্রাকৃতিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকটি প্রাকৃতিক নিয়ম। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড , মহাকাশজগৎ , সৌরব্যবস্থা , পৃথিবীর গড়ন ইত্যাদি সব কিছুই প্রাকৃতিক বা বৈজ্ঞানিক নিয়মে আবদ্ধ । অর্থাৎ বিজ্ঞানের মাধ্যমে বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির রহস্য উদ্ধার করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন । কিন্তু শুধু প্রকৃতি নয় , তাঁরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে , সূর্য , চন্দ্র , গ্রহ , নক্ষত্রের মত প্রাণীজগৎ অর্থাৎ মানুষ , জীবজন্তু , গাছপালা ইত্যাদি কতকগুলি প্রাকৃতির নিয়ম আহনের শৃঙ্খলে বাধা । এই অনুভূতি ও চিন্তারই আর এক না জ্ঞানদীপ্তি ।
জ্ঞানদীপ্তির বিকাশে দার্শনিকদের ভুমিকা:-
ভাবজগতে জ্ঞানদীপ্তির প্রথম স্ফুরণ যাঁদের মধ্যে হয়েছিল , রেনে দেকার্ত ( Rene Decartes ) ছিলেন তাঁদের অন্যতম । জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন ফরাসি । কিন্তু সারা ইউরোপ তিনি পরিভ্রমণ করেছিলেন । দার্শনিক হলেও অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যায় তাঁর ভাল দখল ছিল । তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ হল " Principles of Philosophy " .
অষ্টাদশ শতকে যেসব দার্শনিকের আবির্ভাব হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ডেভিড হিউম , কান্ট , মন্তেস্কু , ভলতেয়ার ও রুশো ছিলেন সবাগ্রগণ্য । তা ছাড়া ছিলেন একদল অর্থনীতিবিদ , যাঁদের বলা হত ফিজিওক্রাট ( Physiocrat ) । এঁদের হাত ধরেই জ্ঞানদীপ্তি পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল ।
বিখ্যাত দার্শনিক মস্তেস্কু ( Montesquieu ১৬৮৯–১৭৫৫ ) একজন প্রভাবশালী লেখক ছিলেন । তিনি নিউটন ও লকের ভক্ত ছিলেন । তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম “ The Persian Letters " । তবে তাকে আমরা মনে রেখেছি তাঁর আরও বিখ্যাত গ্রন্থ " The Spirit of Laws " গ্রন্থের জন্য । এই গ্রন্থে তিনি রাষ্ট্রের কার্যনির্বাহক বিভাগ , আইন প্রণয়ন বিভাগ ও বিচারবিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বিভাজনের কথা বলেছেন ।
ভলতেয়ার ( Voltaire ১৬৯৪–১৭৭৮ ) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী । তিনি ছিলেন একজন কবি , নাট্যকার, সাহিত্যিক , দার্শনিক । তাকে ইউরোপের সাহিত্য জগতের মধ্যমনি বলা হয়। তার লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল --- কাদিদ ও লেতর ফিলোজফিক ।
ফরাসি দার্শনিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন রুশো। তাকে ফরাসী বিপ্লবের জনক বলা হয়। তার লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ হল social contact বা সামাজিক চুক্তি।
3. " Calvinism is the credit of rebels " -Discuss .("ক্যালভিনিজম হল বিদ্রোহীদের কৃতিত্ব" -আলোচনা করুন। )
ভুমিকা:-
ষোড়শ শতকের মধ্যভাগ নাগাদ সংস্কার আন্দোলন থমকে দাঁড়িয়েছিল । যে আবেগ ও উচ্ছ্বাসের মাসে এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল , তাতে যেন ভাঁটার টান দেখা গিয়েছিল । মার্টিন লুথারের মৃত্যুর পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রোটেস্ট্যান্ট মতাদর্শের প্রসার ও প্রভাব বিশেষভাবে ব্যাহত হয়েছিল। নেদারল্যান্ডস , ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে ক্যাথলিক শাসকবর্গ প্রোটেস্ট্যান্ট সমর্থকদের দমন করতে সক্রিয় হয়েছিল । এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় । এমনকি জার্মানিতেও লুথারবাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছিল এবং আশঙ্কা , হতে পারে থাকে যে সেখানে ক্যাথলিক ধর্মমতের পুনরাবির্ভাব ঘটবে । সংস্কার আন্দোলনের এই জটিল সন্ধিক্ষণে কালভিনের আবির্ভাব এক নতুন আশার সঞ্চার করে এবং সংস্কার আন্দোলন এক নতুন গতি লাভ করে , যা ইউরোপ অতিক্রম করে আমেরিকা মহাদেশকেও স্পর্শ করেছিল ।
কালভিনের পরিচয় :-
১৫০৯ সালে কালভিনের জন্ম হয়েছিল উত্তর ফ্রান্সের পিকার্ডি প্রদেশে। বয়সে তিনি লুথারের চেয়ে প্রায় ২৫ বছরের ছোটো ছিলেন । অর্থাৎ তিনি ছিলেন দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কারক । পূর্বসূরিদের পদস্থ অনুসরণ করেই তিনি সংস্কার কার্যে ব্রতী হন । বাল্যকাল থেকে চার্চপদকে তিনি জীবিকা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন । এই উদ্দেশ্যে তিনি মাত্র ২৪ বছর বয়সে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । সেখানে তিনি ধর্মশাস্ত্র ও সাহিত্যের ছাত্র হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন ।
ইরাসমাস ও লুথারের মতবাদ তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল । শেষপর্যন্ত তিনি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস পরিত্যাগ করে প্রোটেস্ট্যান্ট মতাদর্শের প্রতি আসক্ত হন ।কালভিন লুথারের একজন অনুগামীতে পরিনত হন। চার্চের অত্যাচারে তিনি ফ্রান্স ত্যাগ করে সুইৎজারল্যান্ডে আশ্রয় নেন । এখানেই তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “ Institutes of the Christian Religion " - এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ।
কালভিনের চিন্তাভাবনা :-
কালভিনের ধর্মীয় চিন্তাভাবনা প্রকাশ ঘটে তার লেখা Institutes of the Christian Religion গ্রন্থে। তাঁর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল এই যে , মানুষ ঈশ্বরের সন্তান ও তার সমস্ত সত্তা জুড়ে রয়েছে ঈশ্বর ।
মানুষের কর্তব্য হল ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ ও আত্মসমর্পণ করে তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়া । তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন ঈশ্বর মঙ্গলময় , করুণাময় এবং সর্বশক্তিমান । তার বিচারবোধ অত্যন্ত সুক্ষ্ম । তাঁর ইচ্ছাই শেষ কথা এবং সে পথেই মিলবে মুক্তি । মানুষ অক্ষম , মূর্খ , অসহায় ও নীতিভ্রষ্ট । তাই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে নিবেদন করা ছাড়া তার অন্য কোনো পথ নেই । লুথারের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন যে , খ্রিস্টধর্মের মূল আদর্শ হল ঈশ্বরে বিশ্বাস ও ভাক্তি। ঈশ্বরের আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলতে হবে । বাইবেলের মধ্যেই সংকলিত হয়েছে ঈশ্বর নির্দেশিত মুক্তির পথ , যা দেবে সত্যের সন্ধান ।
কালভিন ও লুথারের মধ্যে তুলনা :-
লুথারের সঙ্গে কালভিনের অনেক জায়গায় মিল থাকলেও দুজনের মধ্যে অনেক অমিল ছিল ।
লুথার ছিলেন আবেগপ্রবণ । কিন্তু কালভিন ছিলেন শাস্ত্র সংযত ও যুক্তিবাদী । আইনশিক্ষা তাঁর চিন্তায় প্রভাব ফেলেছিল ।
কালভিন ছিলেন লুথারের তুলনায় চরমপন্থী ও আক্রমণাত্মক । ধর্মশাস্ত্রে বা সরাসরি নিষিদ্ধ নয় , লুথার তা মেনে নিয়েছিলেন । অন্যদিকে কালভিন যা শাস্ত্রসম্মত নয় , তা বর্জন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন ।
রোমান চার্চকে আক্রমণের ক্ষেত্রে কালভিন যতটা অনমনীয় ছিলেন , লুথার তা ছিলেন না ।
লুথারের চিন্তাধারায় যে অতীন্দ্রিয়ভাব লক্ষ করা যায় , কালভিনের মধ্যে তা অনুপস্থিত ছিল । তিনি জোর দেন কর্ম , শৃঙ্খলা ও আত্মনিয়ন্ত্রনের উপর ।
কালভিনবাদের প্রসার :-
কালভিনের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে প্রোটেস্ট্যান্ট মতাদর্শ ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল । ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে তাঁর অনুগামীরা বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল । যেমন ফ্রান্সে তাদের বলা হত হিউগনো বা উগোনো ( Hugenot ) । ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে তারা পরিচিত ছিল প্রেসবাইটেরিয়ান নামে । কালভিনের মাতৃভূমি ফ্রান্সে ক্যাথলিক ধর্ম প্রচলিত থাকলেও অনেকে কালভিনের মতাদর্শ গ্রহণ করেছিল । সংখ্যায় তারা অল্প হলেও যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিল । নেদারল্যান্ডসে প্রথমে লুথারবাদ গৃহীত হলেও পরে তার স্থলাভিষিক্ত হয় কালভিনবাদ ।
কালভিনতন্ত্রের প্রভাব কেবলমাত্র কোনো একটি বিশেষ দেশ ও শ্রেণির মানুষের সীমাবদ্ধ ছিল না । এর আবেদন ছিল সর্বজনীন । শুধু ইউরোপ নয় ; উত্তর আমেরিকা , দক্ষিণ আফ্রিকা , এমনকি কোরিয়াতেও কালভিনতন্ত্র ছড়িয়ে পড়েছিল ।
No comments:
Post a Comment