B.A HISTORY HONOURS
5TH SEM, CBPBU
1 . Make an assessment on the contribution of Martin Luther to relative success of the reformation in Germany .(জার্মানিতে সংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান আলোচনা করো)
Answer:- জার্মানিতে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের জনক ছিলেন মার্টিন লুথার। 1483 খ্রি: জার্মানির একটি কৃষক পরিবারে তিনি জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পছন্দের বিষয় ছিল ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন । পাশাপাশি তিন্ আরিস্টটল, উইলিয়াম প্রমুখ দার্শনিকের আদর্শ দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।১৫০৮ সালে তিনি ভিটেনবার্গ ( Wittenberg ) বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মশাস্ত্রের অধ্যাপক পদে যোগদান করেন ও মৃত্যু পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন । জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যাচর্চার এই পরিমণ্ডলই মার্টিন লুথারের মানসিক বিকাশের সহায়ক হয়েছিল ।
ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শ :-
" ঈশ্বরে ভক্তি ও বিশ্বাসই প্রোটেস্ট্যান্ট মতাদর্শের প্রধান ভিত্তি । লুথারের এই তত্ত্বের উৎস হল সেন্ট পলের ( St. Paul ) রচনা । লুথার মনে করতেন যে মানুষের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই । সে ঈশ্বরের করুণার উপর নির্ভরশীল । কাজেই ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও অগাধ বিশ্বাসই তার মুক্তির একমাত্র পথ । একমাত্র এইভাবেই ঈশ্বরের সঙ্গে মিলন সম্ভব ।
দ্বিতীয়ত , লুথার বিশ্বাস করতেন যে , সত্যের একমাত্র উৎস ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত বাণী , যা সংকলিত রয়েছে বাহবেলে । তাই প্রত্যেকের কর্তব্য বাইবেল পাঠ করা ও তার নির্দেশ অনুসরণ করা উচিত।
তৃতীয়ত , লুথার মনে করতেন ঈশ্বরের কৃপা ও করুণা ছাড়া মানুষের পক্ষে অন্ধকার থেকে আলোয় আসা , অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া অসম্ভব । সাধারণ মানুষের নিজস্ব বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি নেই । কোনটি সত্য আর কোনটি অসত্য তা বিচার করার ক্ষমতা তার নেই । একমাত্র ঈশ্বরের করুণা ও অনুগ্রহের সাহায্যেই সে সত্য দর্শন করতে পারে ।একমাত্র বিশ্বাসের মাধ্যমেই সে মুক্তি পেতে পারে । এর জন্য তীর্থভ্রমণ , ধর্মের বাহ্যিক আচার - অনুষ্ঠান , তথাকথিত সৎকর্ম ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন নেই ।
ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের মিলন ও তার মুক্তির জন্য লুথার তিনটি সূত্রের কথা বলেছিলেন । সেগুলি হল—
( ১ ) Sola fide বা কেবলমাত্র ভক্তি ও বিশ্বাস , এর মাধ্যমে তিনি যুক্তির পরিবর্তে বিশ্বাসের উপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
( ২ ) Sola scriptura বা কেবলমাত্র শাস্ত্রপাঠ ও
( ৩ ) Sola gratia বা কেবলমাত্র ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও কৃপা ।
চার্চের সঙ্গে লুথারের বিরোধ :-
প্রথম দিকে লুথার চার্চের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বা চার্চের সঙ্গে কোনো বিচ্ছেদ চাননি । তিনি নিজে এজন যাজক ও সন্ন্যাসী ছিলেন । কিন্তু ১৫১৭ সালের একটি ঘটনা তাঁকে বিচলিত করে ।ওই বছর পোপ দশম লিও ( Leo ) রোমের সেন্ট পিটার চার্চ নতুন করে নির্মাণ করার জন্য indulgence বা পাপমুক্তিপত্র বিক্রয় করে অর্থ সংগ্রহ করতে ব্রতী হন । লুথার সঙ্গে সঙ্গে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং এইভাবে অর্থ সংগ্রহকে তিনি অনৈতিক বলে অভিহিত করেন । পোপের এই ধরনের কোনো ক্ষমতা আছে বলে লুথার বিশ্বাস করতেন না । তা ছাড়া পাপমুক্তিকে তিনি ক্ষতিকারক বলে মনে করতেন ; কারণ এর ফলে একটি মিথ্যা নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়া যেত , যা মানুষের মুক্তির পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করত ।লুথার স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন- " The Christian who has true repentance , has already received pardon from God altogether apart from an indulgence , and does not need one .
এই পরিস্থিতিতে ১৫১৭ সালের ৩১ অক্টোবর ভিটেনবার্গ গির্জার দরজায় লুথার তাঁর বিখ্যাত ৯৫ দফা ' থিসিস ' টাঙিয়ে দেন এবং পরে তা ছাপাখানার মাধ্যমে দ্রুত বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে । এইভাবে জার্মান সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয় । এই থিসিসটি প্রথমে ল্যাটিন ভাষায় লেখা হলেও পরে তা জার্মান ভাষায় অনুদিত হয় । পাপমুক্তিপত্র বিক্রয়ের বিরুদ্ধে লুথারের এই প্রতিবাদী কণ্ঠ তাকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তোলে এবং চতুর্দিকে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ।
পোপ দশম লিও প্রথমে এই আন্দোলন নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাননি । কিন্তু লুথারের জনপ্রিয়তা ও তাঁর থিসিস নিয়ে চারদিকে শোরগোল পড়ে যাওয়ায় পোপ লুথারকে এই বিষয়ে জবাবদিহি করার জন্য রোমে ডেকে পাঠান । এইভাবে লুথার চার্চের ঐশ্বরিক ক্ষমতায় অনাস্থা প্রকাশ করায় তাঁর সঙ্গে চার্চের বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে পড়ে । ১৫২০ সালে পরপর তিনটি পুস্তিকা প্রকাশ করে তিনি চার্চের উপর তীব্র আক্রমণ করেন ।
প্রোটেস্ট্যান্টবাদের জন্ম :-
লুথার যেভাবে পোপতন্ত্র ও চার্চকে আক্রমণ করেন , তা পোপের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না । তিনি তাঁকে চার্চ থেকে বহিষ্কার করেন এবং এক অধিবেশনে লুথারকে সমাজচ্যুত বলে ঘোষণা করা হয় । লুথার অবশ্য এতে বিচলিত হননি এবং পোপের হুকুমনামা বা নির্দেশ আগুনে পুড়িয়ে দেন । এই অবস্থায় লুথার জার্মান ভাষায় বাইবেল অনুবাদের কাজে ব্রতী হন এবং গ্রিক থেকে জার্মান ভাষায় New Testament অনূদিত হয় । লুথারের অনুবাদ জার্মানিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং অনুবাদের বিক্রয় দু - মাসের মধ্যে ৫০০০ ছাড়িয়ে যায় ।ফলস্বরুপ ১৫২৬ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের স্পেয়ার ( Speyer ) অধিবেশনে জার্মান রাজন্যবর্গ ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট — এই দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।লুথারপন্থীরা প্রোটেস্ট্যান্ট নামে পরিচিত হয় ।
উপসংহার :-
লুথার চার্চের মতাদর্শের মূল ভিত্তি আক্রমণ করলেও কোনো ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলেন নি । আসলে লুথার যতটা বিশ্বাস ও ভক্তির উপর জোর দিয়েছিলেন , চার্চের আনুষ্ঠানিক আচার ও রীতিনীতি নিয়ে ততটা মাথা ঘামাননি । লুথারের মূল লক্ষ্য ও আগ্রহ ছিল ধর্মীয় সংস্কার । তাঁর আন্দোলন অসাধারণ জনপ্রিয় হয় এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই আন্দোলনে সাড়া দিয়েছিল । ধর্মপ্রাণ যেসব মানুষ চার্চে দুর্নীতি ও অধঃপতন এবং পোপতন্ত্রের অবক্ষয় ও পোপদের অর্থলোভ নিয়ে আন্তরিকভাবে ক্রুদ্ধ ছিলেন , তারা লুথারের আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছিল ।
2. Define the term ' Renaissance " . Explain its social roots and effects on European society .( 'রেনেসাঁস' কী? এর সামাজিক কারন এবং ইউরোপীয় সমাজের উপর প্রভাব ব্যাখ্যা কর।)
or,
Discuss the impact of Renaissance on art and literature .(শিল্প ও সাহিত্যের উপর রেনেসাঁর প্রভাব আলোচনা কর। )
Ans:-
রেনেসাস কী :-
Renaissance বা নবজাগরন কথার অর্থ হল পুনর্জন্ম। ব্যাপক অর্থে নবজাগরন হল এমন এক বৌদ্ধিক আন্দোলন যা ইউরোপের শিল্প , সাহিত্য, দর্শন , বিজ্ঞান , রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সুচনা করেছিল। নবজাগরনের প্রথম বিকাশ ঘটে ইতালিতে। পঞ্চদশ শতাব্দীর পরে তা সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।
রেনেসাসের উদ্ভব কাল নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে বেশিভাগ পন্ডিত ও গবেষকরা পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগকে রেনেসাসের উদ্ভব কাল বলে চিহ্নিত করেছেন। 1453 খ্রি: তুর্কি মুুলমানদের হাতে কনস্ট্যান্টিনোপলের পতনের ফলে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল তার উপর গুরুত্ব আরোপ করে পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগকে রেনেসাসের সুত্রপাতের সময় বলে মনে করেছেন। ফরাসি সাহিত্যিক ' বালজাক ' রেনেসাস কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন। ফরাসি ঐতিহাসিক মিশেল সর্বপ্রথম নবজাগরনের ওপর একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
বৈশিষ্ঠ্য :-
১. ইউরোপের রেনেসাঁস হলো মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণ । এই উত্তরণের মধ্য দিয়ে একদিকে মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্য সমূহের পরিসমাপ্তি ঘটে , অপরদিকে আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ সুস্পষ্ট রূপ লাভ করে । মধ্যযুগের সামাজিক প্রথা , রক্ষণশীলতা , ইত্যাদিকে বর্জন করে যুক্তি , জ্ঞান - বিজ্ঞান চর্চা , উদারতার বিকাশ ঘটে। ।
২.পঞ্চদশ শতকের ইউরোপীয় রেনেসাঁস মানুষের চিন্তা চেতনাকে পরিবর্তিত করে যুক্তিবাদে উত্তরণ ঘটায় । যুক্তিবাদের মূল কথা যেকোনো বিষয়কে যুক্তি ও তর্কের মধ্যে দিয়ে গ্রহণ করা ।
৩. পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের পটভূমিতে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে । সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজা এবং জমিদারগণ ক্রামে স্বাধীন হয়ে উঠতে শুরু করে । এইভাবে ইউরোপের ইতিহাসে সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।
৪.রেনেসাঁসের প্রভাবে ইউরোপে সামন্তবাদ থেকে বাণিজ্যবাদে উদ্ভব ঘটে ।
কারন:-
১) ভৌগোলিক কারণ:
ইতালির ভৌগোলিক অবস্থান ইতালিবাসীকে রেনেসাঁর দিকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিল। ভূমধ্য সাগরের মধ্যস্থলে অবস্থিত হওয়ার কারণে ঐ অঞ্চলের বাণিজ্য ও সংস্কৃতির স্বাভাবিক কেন্দ্রস্থল ছিল ইতালি। ক্রুসেডের সূত্র ধরে ইউরোপ ও আরব দেশের মধ্যে যে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে ওঠেছিল তার সবচেয়ে বেশি সুযোগ গ্রহণ করেছিল ইতালি।
২) কনস্টান্টিনোপলের পতন:
১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দে যখন কনস্টান্টিনোপল পতন ঘটে তখন সেখানকার পন্ডিতগণ ইতালিতে চলে আসে। তাঁদের আগমন ইতালিতে রেনেসাঁসের সৃষ্টির পথকে আরও অধিক সহজ করে দেয়। বোকাচ্চিও, পেত্রার্ক প্রভৃতি হিউম্যানিষ্টদের চেষ্টায় ইতালিতে যে সাহিত্য ও শিল্পনুরাগ জেগেছিল কনস্টান্টিনোপল হতে পণ্ডিতদের আগমনের ফলে সেই অনুরাগ এক ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লাভ করে।
৩) মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার:
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপে মুদ্রণযন্ত্রের ব্যবহার শুরু হলে সাহিত্য ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় রচনা হয়। গুটেন বার্গের আবিষ্কার মুদ্রণযন্ত্রে ল্যাটিন ভাষায় বাইবেল ছাপানো হয়। মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার ছিল রেনেসাঁসের বিস্তারে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা। ছাপাখানা স্থাপিত হবার ফলে প্রচুর পরিমাণে পুস্তক ছাপা হওয়ার ফলে সকলেই পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। বই পুস্তক অধ্যয়নের ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের মধ্যে নবচেতনার জন্ম হয়।
৪) মানবতাবাদী লেখকদের অবদান :-
ইউরোপে রেনেসাঁসের পেছনে মানবতাবাদী পন্ডিতদের অবদান অপরিসীম । জ্ঞানের সাধক এই সকল পন্ডিতেরা মানুষের সামগ্রিক কল্যানের জন্য , মানুষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন । অতীত যুগের ইতিহাস , দর্শন , বিজ্ঞান , সাহিত্য , শিল্পকলা প্রভৃতি অধ্যয়ন করে অর্জিত জ্ঞান সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা ছিল তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ।
৫) মানবতাবাদী শিল্পীদের অবদান:-
পঞ্চদশ শতকের মানবতাবাদী শিল্পীরা রেনেসাঁসের সৃষ্টি এবং বিকাশে এক অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করেছিল । মধ্যযুগের শিল্পকলার বিষয়বস্তু ছিল ঈশ্বর এবং যিশু । মানবতাবাদী শিল্পীদের শিল্পকার্যের বিষয়বস্তু ছিল মানুষ ও পৃথিবীতে মানুষের জীবন । পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ কষ্ট আনন্দ বেদনা প্রভৃতি ফুটিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে এই সকল শিল্পী শিল্পকলার ইতিহাসে এক বিপ্লব সাধন করেন ।
৬) নতুন সাহিত্যের বিকাশ:-
পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের রেনেসাঁস সৃষ্টিতে নতুন সাহিত্যের বিকাশ এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে । এইক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ফরাসি দেশের চারণ কবিগণ । এই ধরনের কবিতাকে বলা হতো সিড । ইতালির কবি দান্তে তার রচিত ' ডিভাইন এন্ড কমেডি ' নামক গ্রন্থে ইতালির কথ্য ভাষাকে সাহিত্য রচনার ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন । এই ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ইউরোপের রেনেসাঁসকে নতুন গতি দান করেছিল ।
৭) ইতালির শহরগুলির অবদান:-
ইতালি তথা ইউরোপে রেনেসাঁ সৃষ্টিতে ইতালীর শহরগুলির অবদান অবশ্যই স্মরণীয় । ইতালির দক্ষিণ অঞ্চল ভূমধ্যসাগরীয় তীরবর্তী অঞ্চলে এই শহরগুলি । গড়ে উঠেছিল । এই শহর গুলির অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল বাণিজ্য । বাণিজ্যের প্রয়োজনে এই শহরগুলিতে গড়ে উঠে ছোট ছোট কারখানা । ফলে এই শহরগুলিতে স্বাধীন চিন্তা চেতনা , ব্যক্তিত্বের বিকাশ এবং নাগরিক আদর্শ সৃষ্টির এক অনুকূল পরিবেশ গড়ে ওঠে। বস্তুত জেনোয়া , ফ্লোরেন্স , ভেনিস প্রভৃতি শহর ইউরোপে রেনেসাঁস সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল ।
সাহিত্য ও চিত্রকলায় রেনেসাসের প্রভাব :-
শিক্ষা ও সাহিত্যের মতো অঙ্কন , ভাস্কর্য্য , স্থাপত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে মানবতাবাদ তথা নবজাগরনের প্রভাব ছিল অসীম ।
চিত্রকলা:-
নবজাগরনের সময়কালে ইউরোপের ইতিহাসে বহু চিত্রশিল্পী তাদের প্রতিভার প্রমান রেখে গেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জ্যেত্তো (Giotto), মাজ্জাচো(Masaccio), বতিচেল্লি(Botticelli), লিওনাদো দা ভিঞ্চি, মিকেলাঞ্জেলো, রাফায়েল প্রমুখ।
জ্যেত্তো:-
চতুর্দশ শতকের বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন জ্যেত্তো। তার আকা ' ফ্রেস্কো ', ' সান্তা ক্রোসে' ছবি দুটি সবাইকে মুগ্ধ করে। দ্বিতীয় পর্বে আবির্ভূত হয়েছিলেন মাজ্জাচো। অনেকে তাকে নবজাগরনের যুগের প্রথম মহৎ চিত্রশিল্পীর আখ্যা দিয়েছেন। তার আকা একটি বিখ্যাত চিত্র হল The Trinity.
বতিচেল্লি:-
পঞ্চদশ শতকের একজন খ্যাতনামা শিল্পী হলেন আলেসান্দ্রো বতিচেল্লি । অনেকেই মনে করেন তিনি ছিলেন ইটালির নবজাগরণের সত্তা ও প্রাণ । প্রতিকৃত্তি অঙ্কনে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ ও সুদক্ষ । নবজাগরণের যুগে তিনিই প্রথম প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনির পূর্ণ সদব্যবহার করেছিলেন । তাঁর অনেক ছবিরই ( যেমন ভেনাসের জন্ম , প্রাইমা ভেরা ইত্যাদি ) বিষয়বস্তু ছিল পৌরাণিক কাহিনী ।তার আকা বিখ্যাত ছবি হল - 'ভেনাস' , প্রাইমোভেরা' ইত্যাদি।
লেওনার্দো দা ভিঞ্চি:-
ষোড়শ শতকে চিত্রশিল্পে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে বিখ্যাত শিল্পী লেওনার্দো দা ভিঞ্চি , মিকেলাঞ্জেলো ও রাফায়েল । এঁদের মধ্যে লেওনার্দো দা ( Leonardo da Vinchi , ১৪৫২-১৫১৯ ) ছিলেন সবচেয়ে প্রতিভাবান । তিনি শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না । তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী , ইঞ্জিনিয়ার , লেখক , দার্শনিক — এক কথায় বলা যায় সব বিষয়েই তাঁর ছিল অসীম আগ্রহ । তাঁর বিখ্যাত নোটবই হচ্ছে জ্ঞানের খনি । এখানে পাঁচ হাজারের মতো যন্ত্র , পশু ও মানুষের অ্যানাটমি ও ফলের রেখাচিত্র পাওয়া গেছে । তিনি কল্পনা করেছিলেন এমন এক যন্ত্রের , যার সাহায্যে মানুষ আকাশে উড়তে পারবে । শিল্পচর্চার ক্ষেত্রেও তাই তিনি গ্রিক / রোমান ঐতিহ্যকে অনুকরণ করতে চাননি ।
অসাধারণ যেসব ছবি তিনি এঁকেছেন তার মধ্যে রয়েছে " Virgin of the Rocks " , " Virgin and Child With St. Anne and a Lamb " , " Portrait of a Lady with an Ermine " ইত্যাদি । কিন্তু যে দুটি ছবির জন্য তিনি পৃথিবীবিখ্যাত , তাহল " মোনালিসা ” ও “ শেষ নৈশভোজ ” ( Last Supperit " শেষ নৈশভোজ " ছবিটি আঁকা হয় ১৪৯৭ সালে । জ্যামিতিক অঙ্কনের পরাকাষ্ঠার প্রতীক এই ছবি ।
লেওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো ফ্লোরেন্সের আর এক কৃতী সন্তান মিকেলাঞ্জেলো ( ১৪৭৫-১৫৬৪ ) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী । তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান চিত্রকর , যদিও তিনি নিজেকে মূলত একজন ভাস্কর বলেই মনে করতেন । বস্তুত , স্থাপত্য , ভাস্কর্য , চিত্রশিল্প - প্রতিটিতে তাঁর ভালো দখল ছিল । প্রাণীবিদ্যা ও অঙ্গব্যবচ্ছেদশ নিয়েও তিনি পড়াশোনা করেছিলেন । কবি হিসাবেও তাঁর পরিচিতি ছিল ।রোমে তিনি তিনটি বিখ্যাত ফ্রেস্কো অঙ্কন করেন । এর মধ্যে সিস্তিন ( Sistine ) চ্যাপেলের ছাদে অঙ্কিত চিত্র ও “ শেষ বিচার Last Judgement ) বিখ্যাত । সিস্তিন চ্যাপেলের প্রায় ১৩২ ফুট দীর্ঘ ও ৪৪ ফুট প্রস্থের ছাদে আঁকা ছবি দেখে মহাকবি গোটে মুগ্ধ হয়েছিলেন । এর অঙ্কনকার্য শেষ করতে সময় লেগেছিল চার বছর । " শেষ বিচার " বা " Last Judgement ” - এর কাজ ছিল তুলনামূলক ভাবে সহজ , কারণ এটি আঁকা হয়েছিল লম্বা ও খাড়া দেয়ালে ও বিষয়বস্তু ছিল একটি ।
মিকেলাঞ্জেলো:-
মিকেলাঞ্জেলো প্রতিকৃতি ও মানুষের ছবি আঁকলেও প্রাকৃতিক দৃশ্য নিয়ে কোনো ছবি আঁকেননি । তাঁর শিল্প ছিল মানবধর্মী , প্রকৃতিধর্মী নয় । তিনি ছিলেন একান্তভাবে বাস্তববাদী । মানবদেহকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতেই তিনি ছিলেন আগ্রহী ; কিন্তু তাঁর মনুষ্যমূর্তি ছিল দেবতুল ৷। মানুষের মধ্যেই তিনি যেন দেবত্ব আরোপ করেছেন ।
রাফায়েল:-
এই যুগের আর একজন খ্যাতনামা শিল্পী রাফায়েল । মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে এই শিল্পীর জীবনাবসান হলেও তাঁর অঙ্কিত চিত্রের সংখ্যা অনেক এবং সেগুলির গুণগত মানও তারিফ করার মতো ।রাফায়েল প্রধানত দু - ধরনের ছবি এঁকেছিলেন । প্রথম ধরনের ছবি হল – পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াসের নির্দেশে ভাতিকান প্রাসাদে অঙ্কিত বড়ো আকারের ফ্রেস্কো ও অলংকরণের কাজ । অন্যটি হল ইজেলের কাজ ও বেদিতে অঙ্কিত নানা ছবি । ভাতিকান প্রাসাদে অঙ্কিত The school of Athens , Fire in the Borgo বিখ্যাত।
সাহিত্য :-
পঞ্চদশ শতকের শেষ এবং ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধ ছিল ইউরোপের সংস্কৃতির যুগসন্ধিক্ষণ | এই যুগসন্ধিক্ষণে ইউরোপের সাহিত্যিকরা একই সঙ্গে ল্যাটিন ও মাতৃভাষা চর্চা করেন | ধ্রুপদী গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্যের আঙ্গিক শৈলী অনুভূতি ও সৌন্দর্য বোধ রেনেসাঁস সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছিল |
দান্তে:-
নবজাগরণের মাতৃভূমি ইতালির মানবতাবাদী সাহিত্যিকদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন দান্তে | তিনি ইতালি ভাষায় " লা ভিতা " , " ইল কনভিভিও " , " দ্যা ডিভাইন কমেডি " প্রভৃতি রচনা করে কাব্য চর্চাকে নতুন গতি প্রদান করেন |তাকে ইতালিয় নবজাগরনের অগ্রদূত বলা হয়।
পেত্রার্ক:-
আর এক সাহিত্যিক পেত্রার্ক ( Francesco petrarca ) " সনেটস টু লরা " গ্রন্থের মধ্য দিয়ে জীবনের প্রেম , প্রীতি ও ভালোবাসাকে তুলে ধরেছিলেন । তিনি মূলত গীতিকাব্য রচনার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তাঁর জীবনমুখী সাহিত্য রচনার পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক ডুরান্ট ( W. Durant ) বলেছেন , " পেত্রার্ক ছিলেন প্রথম মানবতাবাদী শিক্ষাবিদ , যিনি মানুষের জীবনকে ভিত্তি করে সাহিত্য সৃষ্টির অধিকার প্রথম প্রচার করেন " |তিনি হোমারের ইলিয়ড ও ওডিসি কাব্য দুটি লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেন। তিনি সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার জনক হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত।
বোকাচিও:-
পেত্রার্ক এর সমসাময়িক বোকাচিও। তিন্ ইতালীয় গদ্যসাহিত্যের জনক ' হিসেবে পরিচিত। তাঁর রচিত ‘ ডেকামেরন ' নামক জীবনমুখী কাব্যগ্রন্থটি ইতালীয় গদ্যসাহিত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন । এটি তাঁর রচিত একশোটি গল্পের সংকলন । এই গ্রন্থে তিনি একদিকে সমাজের নানা পঙ্কিলতা , যাজক ও অভিজাতদের দুর্নীতি তুলে ধরেছেন , আবার অপরদিকে অতি সহজ ও সরলভাবে মানুষের আনন্দ , ভালোবাসা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথাও বিবৃত করেছেন ।
গুরু পেত্রার্কের সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি বহু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেন এবং ইতালিবাসীদের মনে প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষা ও সাহিত্যানুরাগ সৃষ্টি করেন । তাঁরই অনুরোধে পেত্রার্ক ‘ ইলিয়াড ’ ও ‘ ওডিসি ’ গ্রন্থ দুটি ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন ।
ম্যাকিয়াভেলি:-
কৃতী নাট্যকার , ঐতিহাসিক , কবি ও রাজনীতিজ্ঞ নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি ( Nicolo Machiavelli ) তাঁর ‘ দি প্রিন্স ' নামক রাজনীতি - বিষয়ক গ্রন্থের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন । এই গ্রন্থটি ইতালীয় ভাষায় রচিত । তিনি তাঁর জন্মস্থান ফ্লোরেন্সের নেতৃত্বে এক ঐক্যবদ্ধ ইতালির স্বপ্ন দেখতেন । ফ্লোরেন্সের সক্রিয় রাজনীতিবিদ ম্যাকিয়াভেলি বুঝেছিলেন যে , শক্তিশালী শাসকই সুশাসনের ভিত্তি এবং এই শক্তিশালী শাসকের অধীনেই ইতালির স্বাধীনতা ও ঐক্য অর্জিত হবে । ‘ দি প্রিন্স ’ গ্রন্থে তিনি রাষ্ট্র ও রাজনীতির কথাই বলেছেন । তাঁর মতে , রাজনীতির ক্ষেত্রে ধর্ম , নৈতিকতা বা ন্যায় - অন্যায় বলে কিছু নেই । তাঁকে ‘ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক ’ বলা হয় ।
শেক্সপিয়ার:-
ষোড়শ শতকে রানি এলিজাবেথের রাজত্বকালে ইংল্যান্ডের সাহিত্য ও শিল্পজগতে প্রভূত উন্নতি দেখা যায় । তাঁর রাজত্বকাল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ' সুবর্ণ যুগ ' নামে খ্যাত । এই যুগে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার ( William Shakespeare ) - এর আবির্ভাব হয় ।কেবলমাত্র ইংল্যান্ড নয় — তিনি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার হিসেবে স্বীকৃত । তিনি ‘ ম্যাকবেথ ' , ' হ্যামলেট ' , কিং লিয়ার ’ , ‘ জুলিয়াস সিজার ' , ' মার্চেন্টঅফ ভেনিস ' প্রভৃতি ৩৭ টি নাটক রচনা করেন । তার রচিত নাটক গুলিতে মানব জীবনের নানা আশা - আকাঙ্ক্ষা , ব্যথা বেদনা , দেশপ্রেম এবং সমকালীন জীবনযাত্রার নিখুঁত চিত্র ফুটে উঠেছে ।
No comments:
Post a Comment