CBPBU B.A HISTORY
5th sem. CORE :- 12
Answer any ten questions from the following :
( a ) Who did belong to " First Estate " in the French Society ?( ফ্রান্সের সমাজব্যবস্থায় প্রথম শ্রেনী কারা ?)
Answer:- ফ্রান্সের সমাজব্যবস্থায় প্রথম শ্রেনী ছিল যাজকরা। মোট জনসংখার এক শতাংশ না হলেও এরা খুব শক্তিশালী ছিল । এরা গির্জার সম্পত্তির মুল অধিকারী ছিলেন।
( b ) Who was Voltaire ? (ভলতেয়ার কে ?)
Answer:- ভলতেয়ার ( Voltaire ১৬৯৪–১৭৭৮ ) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী । তিনি ছিলেন একজন কবি , নাট্যকার, সাহিত্যিক , দার্শনিক । তাকে ইউরোপের সাহিত্য জগতের মধ্যমনি বলা হয়। তার লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল --- কাদিদ ও লেতর ফিলোজফিক ।
( c ) What is Zollverein ? (জোলভেরাইন কী )
Answer :- প্রাশিয়ার নেতৃত্বে গঠিত একটি শুল্কসংঘ হল জোলভেরাইন । ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির রাজ্যগুলিকে নিয়ে প্রাশিয়ার নেতৃত্বে এটি গড়ে ওঠে।
( d ) When was the treaty of Tilsit signed ? (কখন টিলজিটের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ? )
১৮০৭ খ্রি., ৮ জুলাই রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার নেপোলিয়নের সঙ্গে টিলজিটের সন্ধি স্বাক্ষর করেন।
( e ) Who were Physiocrats ? (ফিজিওক্র্যাট কারা ?)
Answer :- ফিজিওক্র্যাট ছিলেন 1760-এর দশকের এক দল ফরাসি চিন্তাবিদ।যারা বিশ্বাস করতেন যে জাতিগুলির সম্পদ সম্পূর্ণরূপে "কৃষিজমি বা কৃষিপন্য " থেকে প্রাপ্ত হয়েছিল ।
( f ) Give the name of the place where Napoleon was exiled . ( নেপোলিয়নকে কোথায় নির্বাসন দেওয়া হয় ? )
Answer :- নেপোলিয়নকে সেন্ট এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয় ।
( g ) Who won the battle of Trafalgar ? (ট্রাফালগারের যুদ্ধে কে জয়ী হয়?)
Ans:- 1805 খ্রি: ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ট্রাফালগারের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড জয়ী হয়।
( h ) Who were Girondists ?
জিরোন্দিসরা বা গিরোন্দিসরা Girondists, ছিল ফরাসি বিপ্লবের সময় একটি রাজনৈতিক দল । 1791 থেকে 1793 সাল পর্যন্ত, জিরোন্ডিনরা আইনসভা এবং জাতীয় সম্মেলনে সক্রিয় ছিল। তারা প্রাথমিকভাবে জ্যাকবিন আন্দোলনের অংশ ছিল।
( i ) What do you mean by Spanish ulcer ? (স্প্যানিশ আলসার বলতে কী বোঝ ?)
স্পেন এবং পর্তুগালের উপদ্বীপের যুদ্ধ ছিল উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপের সবচেয়ে তিক্ত লড়াই। 1808 থেকে 1814 সাল পর্যন্ত, স্প্যানিশ রেগুলার এবং গেরিলারা, স্যার জন মুর এবং ডিউক অফ ওয়েলিংটনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে নেপোলিয়নের সৈন্যদের যুদ্ধ হয়। ওয়েলিংটনের সেনাবাহিনী পাইরেনিস অতিক্রম করে ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। নেপোলিয়ন এদের "স্প্যানিশ আলসার" বলেছিলেন ।
( j ) What is Kulturkampf ? (কুলটুর কাম্ফ কী? )
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের জার্মান ঐক্যের বিরোধী বলে মনে করতেন। এজন্য তিনি ক্যাথলিকদের দমন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আইন জারি করেন। ফলে জার্মান রাষ্ট্র ও চার্চের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এই দ্বন্দ্ব কুলটুর কাম্ফ বা সভ্যতার সংগ্রাম নামে পরিচিত।
( k ) Who was called " the sick man of Europe " ? (ইউরোপের রুগ্ন মানুষ কাকে বলা হয়?)
Answer:- ইউরোপের রুগ্ন মানুষ বলা হয় তুরষ্ককে।
1. Give an estimate of the role of Mazzini and Cavour in the unification of Italy . Do you notice any difference in their approach to the problem ?
* ইটালির ঐকা আন্দোলনে জোসেফ ম্যাসিনি ও ক্যাভুরের ভূমিকা উল্লেখ করো । উভয়ে যে পন্থা অবলম্বন করেছিল তাতে কী কোন পার্থক্য দেখতে পাও ?
উত্তর :-
প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি ইটালি ফরাসি বিপ্লবের ( ১৭৮৯ খ্রি . ) আগে বিভিন্ন ছোটোবড়ো পরস্পর বিরোধী রাজ্যে বিভক্ত ছিল । ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন এই রাজ্যগুলি জয় করে ঐক্যবন্ধ করলেও তাঁর পতনের পর ভিয়েনা বন্দোবস্তের দ্বারা ইটালিকে আবার বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত করে সেখানে অস্ট্রিয়া সহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয় । ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইটালির জাতীয়তাবাদীরা রাজনৈতিক ঐক্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে । এই আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন জোসেফ ম্যাৎসিনি ও ক্যাভুর।
জোসেফ ম্যাৎসিনি ও ইয়ং ইটালি আন্দোলন
ম্যাৎসিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক , সুলেখক , চিন্তাবিদ , ও বিপ্লবী । তিনি ইটালির জেনোয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন ( ১৮০৫ খ্রি ) । অল্প বয়সেই তিনি স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ ইটালির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন । প্রথম জীবনে তিনি কার্বোনারি নামে এক গুপ্ত সমিতিতে যোগ দিয়ে ইটালিকে বিদেশি শাসনমুক্ত করার চেষ্টা করেন । কিন্তু শীঘ্রই এই আন্দোলনের দুর্বলতা উপলব্ধি করে তিনি এই দল ত্যাগ করেন । বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে কারাদণ্ড ও নির্বাসন দেওয়া হয় ।
আদর্শ : ম্যাৎসিনি উপলব্ধি করেন যে , ইটালির ঐক্যের পথে সবচেয়ে বড়ো বাধা হল অস্ট্রিয়া । অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি ইটালির যুবশক্তিকে ঝাপিয়ে পড়তে অনুরোধ করেন । তাঁর আদর্শ ছিল বিদেশি শক্তির সহায়তা ছাড়া ইটালিবাসী রক্ত ঝরিয়ে দেশে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে । তিনি বলেন , “ শহীদের রক্ত যত ঝরবে , আদর্শের বীজ ততই ফলবতী হবে । ” তিনি উপলব্দি করেন যে , গনসমর্থন ও গনজাগরন ছাড়া কোন সংগ্রাম সফল হতে পারে না। তিনি সমগ্র ইতালিবাসীকে "একাগ্রতার সাথে এগিয়ে চলার (Italia fare de se) আহ্বান করেন।
ইয়ং ইটালি দল গঠন : দেশবাসীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ম্যাৎসিনি নির্বাসিত অবস্থায় ফ্রান্সের মার্সাই শহরে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে ' ইয়ং ইটালি ' নামে একটি যুবদল প্রতিষ্ঠা করেন । এই দল শিক্ষা , আত্মত্যাগ ও চরিত্র নিষ্ঠার দ্বারা দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধের প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ নেয় । এই দল শীঘ্রই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই দলের সদস্যসংখ্যা ৩০ হাজারে পৌঁছায় । ম্যাৎসিনি ' ইয়ং ইটালি ' নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন ।
ফেব্রুয়ারি বিপ্লব : ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব শুরু হলে ইটালিতেও ব্যাপক জাগরণ দেখা দেয় । ভেনিসে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় । নেপল্স , মিলান , লম্বাডি প্রভৃতি রাজ্যেও তীব্র আন্দোলন শুরু হয় । পিডমন্ট সার্ডিনিয়ার রাজা চার্লস অ্যালবার্ট অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন । এসময় ম্যাৎসিনি নির্বাসন ছেড়ে ইটালিতে ফিরে এসে ইয়ং ইটালির সদস্যদের নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন । তাঁর নেতৃত্বে রোম ও টাস্কানিতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ।
ব্যর্থতা : সংগঠনের অভাব , অস্ট্রিয়া ও ফরাসি শক্তির তীব্র দমননীতির ফলে ইয়ং ইটালির আন্দোলন স্তদ্ধ হয় । শেষপর্যন্ত তাঁর আন্দোলন বার্থ হয়ে যায় রোম ও টাস্কানির প্রজাতন্ত্র ধ্বংস হয় । ম্যাসিনি ভগ্নহৃদয়ে বাকি জীবন লন্ডনে কাটান । তবে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন ঠিকই , কিন্তু তিনি ইটালিবাসীর মনে দেশপ্রেমের যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন তা পরবর্তীকালে ইটালির ঐক্য আন্দোলনকে শক্তিশালী করে ।
কাউন্ট ক্যাভুরের ভূমিকা :-
বিদেশি শক্তিগুলিকে বিতাড়িত করে ইটালির ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাঁরা অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাউন্ট ক্যামিলো ক্যাভুর ( ১৮১০-১৮৬১ খ্রি . ) । পিডমন্টের এক অভিজাত পরিবারে তার জন্ম হয়। পড়াশুনা শেষ করে ক্যাভুর ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি পিডমন্টের মন্ত্রীসভায় যোগ দেন।
মতাদর্শ : বাস্তববাদী ক্যাভুর উপলব্ধি করেন যে , বৈদেশিক শক্তির সাহায্য ছাড়া অস্ট্রিয়ার মতো প্রবল শক্তিকে ইটালি থেকে বিতাড়িত করা যাবে না । ক্যাভুর পিডমন্ট সার্ডিনিয়ার স্যাভয় রাজবংশের অধীনে ইটালিকে ঐক্যবদ্ধ করার নীতি গ্রহণ করেন । পিডমন্টের শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন ।শিল্প , বাণিজ্য ও কৃষিতে উন্নতির জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয় । ইংল্যান্ড , ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন করে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে । বাণিজ্য শর্তগুলি শিথিল করে অবাধ বাণিজ্যকে উৎসাহিত করেন ।
কার্যকলাপ :-
অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশি শক্তির সাহায্য লাভের উদ্দেশে ক্যাভুর ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ( ১৮৫৫-১৮ খ্রি . ) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে সহায়তা করেন । যুদ্ধ পরবর্তী প্যারিসের শান্তি বৈঠকে ( ১৮৫৬ খ্রি . ) অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে ইটালি তার অভিযোগগুলি পেশ করার সুযোগ পায় । তিনি ইতালির সমস্যাকে ইউরোপের সমস্যা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন ক্যাভুরকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্লোমবিয়ার্সের চুক্তি :- এই উদ্দেশ্যে ক্যাভুর ১৮৫৬ খ্রি ফ্রান্সের সঙ্গে প্লোমবিয়েসের গোপন চুক্তি স্বাক্ষর করেন । এই চুক্তি অনুসারে ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে পিডমন্টকে সাহায্য দিতে রাজি হয় । ফ্রান্সের সঙ্গে গোপন সন্ধির পর ক্যাভুর অস্ট্রিয়াকে নানাভাবে যুদ্ধের উস্কানি দিলে অস্ট্রিয়া পিডমন্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ( ১৮৫৯ খ্রি . ) করে । ফলে ফ্রান্সও পিডমন্টের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়ে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করতে সাহায্য করে। কিন্তু ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন মাঝপথে যুদ্ধ বন্ধ করে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধি ( ১৮৫৯ খ্রি . ) স্বাক্ষর করে । এই সন্ধির দ্বারা পিডমন্টের সঙ্গে লম্বার্ডি ও মিলান যুক্ত হয় ।
ক্যাভুরের প্রতিক্রিয়া :-
ক্যাভুর ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধির বিরোধিতা করলেও পিডমন্টের রাজা ভিক্টর ইমান্যুয়েল উপলব্ধি করেন যে , ফ্রান্সের সহায়তা ছাড়া অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে জয় লাভ করা সম্ভব নয় । তাই তিনি যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়ে এই সন্ধি মেনে নেন এবং অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জুরিখের সন্ধি ( ১৮৫৯ খ্রি . ) স্বাক্ষর করেন । এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ক্যাভুর পদত্যাগ করেন ।
কাভূরের ক্ষমতা লাভ :-
কাভূরের পক্ষে বেশিদিন রাজনীতির বৃত্তের বাইরে থাকা সম্ভব হয়নি । ১৮৫৯ - এর জুলাইয়ে পদত্যাগ করে ১৮৬০ - এর জানুয়ারিতে স্বেচ্ছায় তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরে এসেছিলেন । এই দ্রুত প্রত্যাবর্তনের কারণ ছিল ইতালির পরিবর্তিত পরিস্থিতি । ভিল্লাফাৎকার চুক্তির রাজনৈতিক গুরুত্ব যাই থাক , সাধারণ মানুষের কাছে তা ছিল মূলাহীন । তাই মধ্য - ইতালির জনগণ গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পিড্মন্টের সাথে সংযুক্তির দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করে । টাস্কেনির অস্ট্রীয়ান শাসক পালিয়ে যান । সেখানে অস্থায়ী সরকার স্থাপিত হয় । আসলে গণজাগরণের এই সুযোগ কাতুর হাতছাড়া করতে চাননি । তিনি স্বেচ্ছায় নিজ দায়িত্ব পুনগ্রহণ করেন এবং কূটনৈতিক উপায়ে ইতালির ঐক্য প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে উদ্যোগী হন । কাভুর ফ্রান্সকে স্যাভয় ও নিস প্রদানের শর্তে পিডমন্টের সাথে মধ্য ইতালীয় ডাচিগুলির সংযুক্তির ক্ষেত্রে ফ্রান্সের সমর্থন আদায় করেন । ১৮৬০ - এর ১১-১২ই মার্চ গণভোটের মাধ্যমে পিডমন্টের সাথে টাস্তেনি , পার্মা ও মডেনার সংযুক্তি ঘটে ।
জোসেফ ম্যাসিনি ও ক্যাভুরের নীতির মধ্যে পার্থক্য :-
ম্যাসিনির আদর্শ ছিল বিদেশি শক্তির সহায়তা ছাড়া ইটালিবাসী রক্ত ঝরিয়ে দেশে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা । তিনি উপলব্দি করেন যে , গনসমর্থন ও গনজাগরন ছাড়া কোন সংগ্রাম সফল হতে পারে না। অন্যদিকে ক্যাভুর উপলব্ধি করেন যে , বৈদেশিক শক্তির সাহায্য ছাড়া অস্ট্রিয়ার মতো প্রবল শক্তিকে ইটালি থেকে বিতাড়িত করা যাবে না ।
ম্যাসিনি স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ ইটালির স্বপ্ন দেখতেন কিন্তু ক্যাভুর পিডমন্ট সার্ডিনিয়ার স্যাভয় রাজবংশের অধীনে ইটালিকে ঐক্যবদ্ধ করার নীতি গ্রহণ করেন ।
গ্যারিবল্ডি : ইতালির এমন একটা সংকটময় সময়ে আগমন ঘটে ইতালির ঐক্য আন্দোলনের অপর একজন প্রাণপুরুষ গ্যারিবল্ডি । গ্যারিবল্ডি ছিলেন একজন আদর্শ দেশপ্রেমিক । তিনি ছিলেন ইয়ং ইতালির সদস্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার উরুগুয়েতে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র সরকার গঠনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ।
সিসিলিতে কৃষক আন্দোলন:- ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ইতালির সিসিলিতে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হলে গ্যারিবল্ডির কাছে সিসিলি ও নেপলসের অধিবাসীরা সাহায্য প্রার্থনা করেছিল । গ্যারিবল্ডি গেরিলা যুদ্ধ কৌশলে দক্ষ ছিলেন । তার সেনাবাহিনীকে ' লাল কোর্তা ' বলা হত ।
গ্যারিবল্ডির সিসিলি ও নেপলস অভিযান:- গ্যারিবল্ডি তার এক হাজার লাল কোর্তা বাহিনীর সাথে সিসিলি ও নেপলসে অবতরণ করেন । এই অঞ্চল দুটিকে তিনি অধিকার করে নেন এবং এর ফলে দক্ষিণ ইতালিতে প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয় । এরপর তিনি ইতালিতে পোপের রাজ্য আক্রমণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন ।
গ্যারিবল্ডির অবদান :- গ্যারিবল্ডি এবং ম্যাৎসিনি নীতির দিকে থেকে অনেকটা কাছের লোক ছিলেন , কারণ উভয়েই ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থক । তিনি সিসিলি ও নেপলসকে ভিক্টর ইম্যানুয়েলের হাতে সমর্পণ করেন । এরফলে গৃহযুদ্ধের হাত থেকে ইতালি রক্ষা পায় । এর ফলে তার উদারতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায় ।
Marks :-10
1. What were the causes of the Industrial Revolution in England ? (ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের কারণ কী?)
Answer :- Industrial Revolution ' কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘ শিল্পবিপ্লব ’ । ফরাসি দার্শনিক অগাস্ত ব্লঙ্কি ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ‘ শিল্পবিপ্লব ' কথাটি ব্যবহার করেন । পরবর্তীকালে ইংরেজ ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি তাঁর অক্সফোর্ড বক্তৃতামালায় ‘ শিল্পবিপ্লব ' কথাটি ব্যবহার করে এটি জনপ্রিয় করে তোলেন ।অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে ইউরোপের শিল্পক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে শিল্পোৎপাদনের পরিমাণগত ও গুণগত যে অগ্রগতি ঘটে তা ' শিল্পবিপ্লব ’ নামে পরিচিত ।ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হলে ক্রমে তা আমেরিকা, ফ্রান্স , জার্মানি ইত্যাদি দেশে ছড়িয়ে পড়ে।ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লবের কারনগুলি হল ----
a) উন্নত কৃষি ব্যবস্থা:- অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যা প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য ও কৃষিজাত পন্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এককথায় ইংল্যান্ডে কৃষিতে বিপ্লব ঘটে যা শিল্প বিপ্লবের সুচনা ঘটাতে সাহায্য করে।
b) প্রাকৃতিক পরিবেশ:- সাধারণভাবে কেউ কেউ ইংল্যান্ডের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ভৌগোলিক অবস্থানকে শিল্পায়নের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন । এঁদের মতে , ইংল্যান্ডের স্যাঁতসেতে আবহাওয়া সুতো কাটা ও রং পাকা করার উপযোগী ছিল । তাই বস্ত্রশিল্পে ইংল্যান্ড অগ্রণী ভূমিকা নিতে পেরেছিল । তাছাড়া ইংল্যান্ডের নদী ও জলপ্রপাতগুলি জলপথে পরিবহনের সুবিধা করেছিল । এছাড়া শিল্পায়নের অতি উপযোগী দুটি উপাদান কয়লা ও লোহার সহজলভ্যতা ইংল্যান্ডে শিল্পায়নে সাহায্য করেছিল ।
c) কাঁচামালের জোগান :- অষ্টাদশ শতকে কৃষিবিপ্লবের ফলে শিল্পের প্রয়োজনীয় প্রচুর কাঁচামাল উৎপাদিত হতে থাকে । তাছাড়া ইংল্যান্ড তার সুবিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য থেকে সস্তায় শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারত। ফলে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের কোন অভাব হত না।
d) মূলধনের জোগান :- শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে প্রচুর পরিমানে মূলধনের প্রয়োজন হয়। ইংল্যান্ডে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রসার এই মূলধনের জোগান দিয়েছিল । তাছাড়া ইংল্যান্ড তার উপনিবেশগুলি থেকে যে অর্থসম্পদ শোষণ করেছিল তা ব্যবসা বানিজ্যে বিনিয়োগ করেছিল । ফলে ইংল্যান্ডের শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের কোনো অভাব হয়নি ।
e ) বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার :- ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প - বিপ্লবের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে কেউ কেউ সেদেশে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলির কথা বলেছেন । এই গোষ্ঠির ঐতিহাসিকেরা মনে করেন , অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্রিটেনে মানসিক বিকাশ ও বিজ্ঞানচর অনুকূল পরিবেশ ছিল । ফলে বিজ্ঞানচর্চা বেড়েছিল । ঐতিহাসিক রস্টো লিখেছেন , “ অষ্টাদশ শতকে ব্রিটেনের এই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গীই তাকে অবশিষ্ট ইউরোপ থেকে স্বতন্ত্র করে দিয়েছে । " অষ্টাদশ শতকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার , যেমন —–— ফ্লাইং শাটল , স্পিনিং জেনি , ওয়াটার ফ্রেম , মিউল প্রভৃতি আবিস্কার ইংল্যান্ডের শিল্পায়নের অগ্রগতিতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে ।
f ) বাজার : এসময় ইংল্যান্ডের কৃষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পেলে তাদের শিল্পপণ্য কেনার ক্ষমতা বাড়ে, অন্যদিকে ইংল্যান্ড তার সুবিশাল উপনিবেশগুলিতে পণ্য বিক্রির সুযোগ পায় । ফলে ইংল্যান্ডের শিল্পসামগ্রী বিক্রির সুবিশাল বাজার গড়ে ওঠে ।
g ) শ্রমিকের যোগান :- পুঁজি , বাজার ও কাঁচামালের যোগান যেমন দ্রুত শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন , তেমনি কলকারখানায় শ্রমিকের স্বাভাবিক যোগান ছাড়া শিল্পবিকাশ সম্ভব নয় । এদিক থেকেও ইংল্যান্ড । অন্যান্য দেশের তুলনায় অনুকূল অবস্থায় ছিল । সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যা অভাবনীয় হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল । জনসংখ্যার বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিল্পবিকাশে সহায়ক ছিল । তাছাড়া অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের কৃষি জমিগুলিকে চারনভুমিতে পরিনত করা হয়। ফলে অসংখ্য বেকার যুবক নামমাত্র মজুরিতে শহরের কারখানা গুলিতে শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত হয়।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে শিল্পবিপ্লব কোন আকস্মিক ঘটনা নয় , ধীরে ধীরে এর সুচনা ঘটেছিল এবং বিভিন্ন কারন দায়ী ছিল।
Explain whether the unification of Germany under the leadership of Bismarck was German unification or Prussian expansion .বিসমার্কের নেতৃত্বে জার্মানির একীকরণ জার্মান একীকরণ নাকি প্রুশিয়ান সম্প্রসারণ ছিল তা ব্যাখ্যা কর।
Answer :-
ইউরোপের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৭৯৯ থেকে ১৮১৪ সময়কালকে যদি বোনাপার্টের যুগ বলা যায় ,তাহলে ১৮৭১ থেকে ১৮৯০ সময়কালকে ইউরোপে " বিসমার্কের যুগ ' বলা মন্দ হয় না । বিচ্ছিন্ন জার্মান আজগুলিকে যে তীক্ষ্ণ কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দক্ষতায় তিনি ঐক্যবদ্ধ করে মধ্য ইউরোপে একটি শক্তিশালী সামরিক রাজতন্ত্র ( military monarchy ) গড়ে তুলেছিলেন , তা অনবদ্য ।
বিসমার্ক :-
ঐক্যবদ্ধ জার্মানির প্রধান রূপকার ছিলেন বিসমার্ক । ১৮৬২ খ্রি: প্রাশিয়ার চ্যান্সেলার যোগদানের পর তিনি জার্মানির একীকরণের জন্য যুদ্ধনীতি গ্রহণ করেন । তখন বিসমার্কে উপাধি ছিল যে , নিছক আলাপ - আলোচনা দ্বারা বিচ্ছিন্ন জার্মানির ঐক্য সম্ভব নয় । ফ্রাঙ্কফ পার্লামেন্টের ব্যর্থতা তাঁকে এই সত্যে উপনীত হতে সাহায্য করেছিল । অতঃপর তিনি রক্ত ও লৌহ নীতি দ্বারা তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানির ঐক্য সম্পূর্ণ করেন ( ১৮৭০ খ্রঃ ) । ১৮৭১ এ ঐকাবন্ধ জার্মান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর প্রত্যাশামতো বিসমার্কই নতুন জার্মানির চ্যান্সেলার নিযুক্ত হন ।
বিসমার্কের লক্ষ্য ছিল জার্মানির ঐক্যসাধন । তাই পর পর তিনটি যুদ্ধ দ্বারা তিনি জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেন ----
a) ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ :-
ডেনমার্কের রাজা লন্ডন চুক্তি ( ১৮৫২ খ্রি . ) লঙ্ঘন করে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে শ্লেসউইগ ও হলস্টাইন নামে প্রদেশ দুটি সরাসরি দখল করে নেন । ফলে বিসমার্ক অস্ট্রিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ( ১৮৬৪ খ্রি . ) করেন । যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ডেনমার্ক গ্যাস্টিনের চুক্তি ( ১৮৬৫ খ্রি ) স্বাক্ষরে বাধ্য হয় । চুক্তিতে স্থির হয় যে প্রাশিয়া শ্লেসউইগ এবং অস্ট্রিয়া হলস্টাইন লাভ করবে । ভবিষ্যতে তারা যৌথভাবে শ্লেসউইগ ও হলস্টাইন সমস্যা সমাধান করবে।
b) অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে স্যাডোয়ার যুদ্ধ :-
ইতিমধ্যে অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয়তা কমে গেলে বিসমার্ক গ্যাস্টিনের চুক্তি ভঙ্গের অজুহাতে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন । ১৮৬৬ খ্রি: স্যাডোয়ার যুদ্ধে অস্ট্রিয়া প্রাশিয়ার কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় । প্রাশিয়ার কাছে পরাজিত অস্ট্রিয়া প্রাগের সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হয় । এই সন্ধির ফলে অস্ট্রিয়া জার্মানির নেতৃত্ব ত্যাগ করে।
c) ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ :-
অস্ট্রিয়া পরাজয়ের পর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হয় প্রাশিয়া। অস্ট্রিয়া, ইতালি ও রাশিয়াকে নিরপেক্ষ রেখে বিসমার্ক ফ্রান্সকে যুদ্ধের জন্য পরোচিত করেন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স বিসমার্কের কূটনৈতিক জালে জড়িয়ে প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এবং সেডানের যুদ্ধ ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন পরাজিত হন।ফ্রাঙ্কফুর্টের সন্ধির দ্বারা ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ১০মে, এই যুদ্ধের অবসান ঘটে। এবং জার্মানির রাজনৈতিক ঐক্য সম্পন্ন হয়।
ফ্রান্সকে বিচ্ছিন্ন করার নীতি :-
বিসমার্ক কার্যত ফ্রান্সকে ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার নীতি অনুসরণ করেন। তিনি জানতেন যে, ফ্রান্সের পক্ষে পরাজয়ের অপমান সহ্য করা সম্ভব নয়। সেইজন্য তিনি অসাধারণ কূটকৌশল প্রয়োগ করে ফ্রান্সকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
ফ্রান্সকে মিত্রহীন ও একা রাখার জন্য বিসমার্ক যে কূটনৈতিক নীতি গ্রহণ করেন। তার দ্বারা তিনি ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনে ব্রতী হন। এই মৈত্রী নীতি বিসমার্কের বিচক্ষণতার অপূর্ব নিদর্শন।
বিসমার্ক জার্মানির ঐক্য সাধন করতে বিসমার্ক কতগুলো চুক্তি সম্পাদন করে সেগুলি হল নিম্নরূপ ---
তিন সম্রাটের চুক্তি :-
বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বিসমার্কের কূটনৈতিক দক্ষতা প্রথমেই প্রমাণিত হয়। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই সময় অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ও জার্মানি-র সম্রাটদের মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক চুক্তি বা বন্ধুত্বের এর চুক্তি সম্পাদন করেন। এর নাম ছিল তিন সম্রাটের চুক্তি।
দ্বিশক্তি চুক্তি : বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সাথে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে একটি গোপন দ্বিশক্তি চুক্তি সম্পাদন করেন । এই চুক্তির দ্বারা স্থির হয় যে , রাশিয়া যদি যুদ্ধে ফ্রান্সকে সাহায্য করতে অগ্রসর হয় তবে উভয়পক্ষ মিলিতভাবে যুদ্ধ করবে ।
ত্রিশক্তি চুক্তি : বিসমার্কের চেষ্টার ফলে জার্মানি ও অষ্ট্রিয়াকে নিয়ে গঠিত দ্বিশক্তি চুক্তিতে ইতালি যোগদান করতে সমর্থ হয় । এর ফলে জার্মানি ও অষ্ট্রিয়া পররাষ্ট্রীয় আক্রমণ ও যুদ্ধ থেকে অনেকটা নিরাপদ অনুভব করে । ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে এই শক্তি ফলে ইতালি অনেকটা নিরাপদ অনুভব করে এবং ঐতিহাসিক ত্রিশক্তি চুক্তির উদ্ভব হয় ।
রি - ইনসিওরেন্স চুক্তি : বিসমার্ক দ্বিশক্তি- ত্রিশক্তি চুক্তিতেও সন্তুষ্ট হয়নি । যদি চার মিত্র না হয় তাহলে জার্মানি পূর্ব রাশিয়াতে অসংরক্ষিত হয়ে পড়বে । বিসমার্ক কোন উপায় রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা চুক্তি নতুবা নিরপেক্ষ চুক্তি স্বাক্ষর করতে বদ্ধপরিকর হয় । তার অসাধারণ কূটনৈতিক বিচক্ষণতার ফলে শেষ পর্যন্ত তার উদ্দেশ্য সফল হয় । ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে বিসমার্ক রাশিয়ার সঙ্গে রি - ইনসিওরেন্স চুক্তি সম্পাদন করেন । এই চুক্তি দ্বারা রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দেয় যে তৃতীয় কোন রাষ্ট্র জার্মানি আক্রমণ করলে রাশিয়া নিরপেক্ষতা অবলম্বন করবে । এইভাবে বিসমার্ক অন্যান্য সাধারণ কুটকৌশল ও কূটনৈতিক দক্ষতার সাহায্যে জার্মানিকে ইউরোপীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করেন ।
Write a short note on ' Metternich System ' . Why did it ultimately fail ? (মেটারনিক ব্যবস্থা কী ? এটি শেষ পর্যন্ত কেন ব্যর্থ হয় ? )
Answer :- অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স ক্লেমেন্স মেটারনিখ ছিলেন সমকালীন ইউরোপীয় রাজনীতির উজ্জ্বলতম নক্ষত্র । ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ইউরোপীয় রাজনীতিতে তিনিই ছিলেন প্রধান নিয়ন্ত্রক । এজন্য ঐতিহাসিক ফিশার এই সময়কালকে ‘ মেটারনিখের যুগ ' বলে অভিহিত করেছেন ।
মেটারনিখ ব্যবস্থা:- অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিখ ভিয়েনা সম্মেলনের সিদ্ধান্তের দ্বারা ইউরোপের অন্যান্য দেশে বিভিন্ন রক্ষণশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করেন । ইউরোপে বিপ্লবের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে তিনি উদ্যোগী হন। ফরাসি বিপ্লব - প্রসূত উদারতন্ত্র , জাতীয়তাবাদ , গণতন্ত্র প্রভৃতি প্রগতিশীল ভাবধারার অগ্রগতি রোধ করার চেষ্ঠা করেন। অস্ট্রিয়ার স্বার্থসিদ্ধি করা এবং ইউরোপে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য তিনি যে যে দমনমূলক নীতি চালু করেন তা ‘ মেটারনিখ পদ্ধতি ’ বা ‘ মেটারনিখ ব্যবস্থা ’ নামে পরিচিত ।
মেটারনিখ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :-
মেটারনিখ ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল—
1 )পুরাতনতন্ত্র : মধ্যযুগীয় অভিজাততন্ত্র , ঐশ্বরিক এবং বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র , পুরোহিততন্ত্র , ক্যাথোলিক গির্জার প্রাধান্য প্রভৃতি পুরোনো ভাবধারাগুলি পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মেটারনিখ আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে যান ।
2 ) বিপ্লব - বিরোধিতা : মেটারনিখ ফরাসি বিপ্লব এবং বিপ্লব প্রসূত আধুনিক যেমন – উদারতন্ত্র , জাতীয়তাবাদ , গণতন্ত্র প্রভৃতির তীব্র বিরোধী ছিলেন । তিনি এসব আধুনিক ভাবধারাকে রাজনৈতিক মহামারি বলে মনে করতেন ।
3 ) পরিবর্তনের বিরোধিতা : মেটারনিখতন্ত্রের মূলকথা হল পরিবর্তনের বিরোধিতা করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা । সব ধরনের পরিবর্তনের বিরোধী মেটারনিখ ইউরোপের রাজাদের পরামর্শ দিতেন , “ রাজত্ব করুন কিন্তু কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার করবেন না । "
4 ) অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য রক্ষা : অস্ট্রিয়ায় বহু জাতি , ভাষা ও ধর্মের মানুষের বসবাসের ফলে সেদেশে বিপ্লব - প্রসূত ভাবধারাগুলির প্রবেশ ঘটলে সাম্রাজ্য ভেঙে যেত । এজনা পুরাতনতন্ত্র ফিরিয়ে এনে অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যকে রক্ষা করা এবং ইউরোপীয় রাজনীতিতে যে কোনো উপায়ে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য ও নেতৃত্ব বজায় রাখাই মেটারনিখের মূল উদ্দেশ্য ছিল ।
5) ইউরোপে পদক্ষেপ : মেটারনিখ অস্ট্রিয়ায় রক্ষণশীল নীতি চালু করলেও ইউরোপের অন্যান্য দেশে বিপ্লবী ভাবধারা ছড়িয়ে পড়লে তা ক্রমে অস্ট্রিয়ায় ঢুকে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করবে বলে সন্দেহ করেন । এজন্য তিনি অস্ট্রিয়ায় নয় , ইউরোপের অন্যান্য দেশেও আধুনিক ভাবধারা প্রতিহত করার উদ্যোগ নেন ।
মেটারনিখের ব্যর্থতার কারণ :-
অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিখ ইউরোপে অন্তত তিন দশক সাফল্যের সঙ্গে তাঁর রক্ষণশীল নীতি কার্যকর করলেও শেষপর্যন্ত তাঁর নীতি ব্যর্থ হয় এবং ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের আঘাতে তাঁর পতন ঘটে । মেটারনিখের ব্যর্থতার কারণ গুলি হল ----
a) নেতিবাচক নীতি : -মেটারনিখের নীতি ছিল নেতিবাচক এবং সংস্কারবিরোধী । তিনি ফরাসি বিপ্লব ও উদারতন্ত্রের ধ্বংসাত্মক দিকটি দেখলেও এর গঠনমূলক দিকটি দেখতে ব্যর্থ হয়েছেন ।
b) নতুন যুগের আগমন :-ঊনবিংশ শতকে ইউরোপে শিল্পবিপ্লব , নগরজীবনের প্রসার , বুর্জোয়াদের প্রাধান্য প্রভৃতির ফলে নতুন যুগের আগমন ঘটে । এর সঙ্গে মেটারনিখের পুরোনো নীতি মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না ।
c) যুগধর্মের বিরোধিতা :- ঊনবিংশ শতকের শুরুতে ইউরোপে ফরাসি বিপ্লব - প্রসূত আধুনিক ভাবধারাগুলি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে । কিন্তু মেটারনিখ যুগধর্মকে উপেক্ষা করে পিছিয়ে পড়া পুরানো নীতিগুলিই আঁকড়ে ধরে থাকেন ।
d ) ইউরোপীয় দেশগুলির বিরোধিতা :- ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মেটারনিখের নীতির বিরোধিতা করে এই নীতি ত্যাগ করে । ইংল্যান্ড ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে , রাশিয়া ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে এবং ফ্রান্স ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে এই নীতি থেকে সরে আসে ।
e ) ফেব্রুয়ারি বিপ্লব : ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সময় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় যে ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয় তা ক্রমে বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে । নিরুপায় মেটারনিখ ইংল্যান্ডে পালিয়ে যান । এভাবে মেটারনিখতন্ত্রের পতন ঘটে ।
To what extent did the writings of the philosophers in the 18th century France influence the French Revolution of 1789 ? (ফ্রান্সে দার্শনিকদের লেখা 1789 সালের ফরাসি বিপ্লবকে কতটা প্রভাবিত করেছিল?)
or,
Do you think that the fiscal causes lay at the root of the French Revolution ? (আপনি কি মনে করেন যে ফরাসি বিপ্লবের মূলে আর্থিক কারণগুলি নিহিত ছিল?)
Or,
Do you think that a more responsible monarchy could have prevented the French Revolution ? (আপনি কি মনে করেন যে আরও দায়িত্বশীল রাজতন্ত্র ফরাসি বিপ্লবকে প্রতিরোধ করতে পারে? )
Or,
What was the Tennis Court Oath ? (টেনিস কোর্টের শপথ কি ছিল?)
Who was Rousseau ? What were his chief ideas ? (রুশো কে ছিলেন? তার প্রধান ধারণা কি ছিল? )
ফরাসি বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণ :-
ফ্রান্সের আর্থিক দুরবস্থা ফরাসি বিপ্লবের জন্য বহুলাংশে দায়ী , ফরাসি সমাজ অধিকারভোগী এবং অধিকারহীন এই দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল অধিকারভোগী শ্রেণি ফ্রান্সের অধিকাংশ ভূ - সম্পত্তির মালিক ছিল , কিন্তু এজন্য তারা রাষ্ট্রকে কোনো কর দিত না । অপরপক্ষে দরিদ্র জর্জরিত কৃষকদের সমস্ত করের বোঝা বহন করতে হত । রাষ্ট্র , জমিদার , গির্জা তাদের কাছ থেকে নানা প্রকার কর আদায় করতো । এই সমস্ত কারণ প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত , যথা--
প্রত্যক্ষ কর :- সরাসরি তৃতীয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এই কর আদায় করা হত । এই করগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেইল বা ভূমিকর , ক্যাপিটেশন বা উৎপাদন কর , ভিটিংয়েম বা আয়ের উপর ধার্য কর ।
পরোক্ষ কর:- ফ্রান্সে একাধিক পরোক্ষ কর চালু ছিল । যথা গ্যাবেলা বা লবণের ওপর ধার্য কর , টাইথ ' বা ধর্মকর , এইডস বা মদ , তামাকের ওপর আরোপিত কর । এছাড়া নানা ধরণের সামন্তকর আদায় করা হত জনগণের কাছ থেকে । এছাড়াও ছিল জনাকর , মৃত্যুকর । পথ , সেতু , খেয়াঘাটের ওপর নির্ধারিত পেয়াজ প্রভৃতি কর । বলাবাহুল্য এই বৈষম্যমূলক কর ব্যবস্থা ফরাসি বিপ্লবের একটি অন্যতম কারণ।
ফরাসি বিপ্লবের সামাজিক কারণ :- বিশ্ব ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য , যুগান্তকারী , সুদূরপ্রসারী ঘটনা হয় ফরাসি বিপ্লব । বিপ্লব বলতে বোঝায় কোন প্রচলিত । ব্যবস্থার অতি দ্রুত ও কার্যকরী পরিবর্তন । এই অর্থে ফরাসি বিপ্লব ফরাসি পুরাতন তন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ফ্রান্সের সর্বত্র এক নতুন দিশা জুগিয়েছিল । অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে প্রচলিত চিরাচরিত আর্থ - সামাজিক কাঠামোয় অসঙ্গতি ও ত্রুটি ছিল যার মধ্যেই ফরাসি বিপ্লবের বীজ নিহিত ছিল । ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফরাসি সমাজ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল যথা --
( 1 ) প্রথম এসেস্ট বা শ্রেণি : যাজকরা ছিল প্রথম সম্প্রদায়ভুক্ত । 1789 খ্রি . তাদের সংখ্যা ছিল । লক্ষ 20 হাজার , মোট জনসংখ্যার এক শতাংশও না হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে তারা প্রবল শক্তিশালি ছিল । এরা ছিল আইনের উর্দ্ধে , এদের মধ্যে দুটি ভাগ ছিল । যথা- ( ক ) উচ্চ যাজক : এরা গির্জার সম্পত্তির মূল অধিকারী ছিল । ( খ ) নিম্ন যাজক : গির্জার সম্পত্তিতে এদের অধিকার না থাকলেও এরা ছিল সৎ , উচ্চ যাজকদের এরা ঘণার চোখে দেখত ।
দ্বিতীয় এসেস্ট বা শ্রেণি : অভিজাতরা ছিল দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত । 1789 খ্রি . তাদের সংখ্যা ছিল 3 লক্ষ 50 হাজার । সমগ্র জনসংখ্যার দেড় ভাগ , অথচ মোট কৃষি জমির 1/5 অংশের মালিক ছিল এরা । এরা দুটি দলভুক্ত ছিল- ( ক ) দরবারি অভিজাত : যে সমস্ত অভিজাতরা জন্মসূত্রে অভিজাতপদ পেত তাদের দরবারি বা জন্মসূত্রে অভিজাত বলা হত । এরা রাজাকে স্বেচ্ছাকর দিত । ( খ ) পোশাকি অভিজাত : যে সমস্ত ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে অভিজাত পদ ক্রয় করতো তাদের পোশাকি অভিজাত বলে । এই দুই দলের বিরোধ বিপ্লব ডেকে আনে ।
( iii ) তৃতীয় এসেস্ট বা শ্রেণি:- ফ্রান্সের সাতানব্বই জনকে নিয়ে গঠিত হয় তৃতীয় শ্রেনি। এদের মধ্যে ছিল বুর্জোয়া , কৃষক , শ্রমিক , কারিগর , ভবঘুরে প্রমুখ । সমাজের সর্বপ্রকার করের বোঝা এদের বইতে হত অথচ এদের কোনো সামাজিক মর্যাদা ছিল না । ফলে এই শ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ , ক্ষোভ ক্রমশ পুঞ্জিভূত হয় যা 1789 খ্রি . ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে প্রকাশ পায় ।
ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ :-
অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে বুরবো বংশের নেতৃত্বে কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচারী রাজতত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল । ঐশ্বরিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী এই রাজতন্ত্রে রাজা ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ শাসক , আইন প্রণয়নকারী এবং প্রধান বিচারক । শাসনব্যবস্থায় জনগণের মতামতের কোনো মূল্য ছিল না । ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব সৃষ্টিতে রাজতন্ত্রের বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি ও রাজতন্ত্রের দায়িত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল ।
1 রাজাদের দুর্বলতা : ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই ( ১৬৪৩ ( ১৭১৫ খ্রি . ) ছিলেন চরম স্বৈরাচারী । তিনি বলতেন “ আমিই রাষ্ট্র ” । অলস ও বিলাসী রাজা পঞ্চদশ লুই ( ১৭১৫-৭৪ খ্রি . ) তাঁর উপপত্নী এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শাসন পরিচালনা করলে প্রশাসন দুর্নীতি ও স্বজনপোষণে ছেয়ে যায় এরপর অযোগ্য রাজা ষোড়শ লুই ( ১৭৭৪-৯৩ খ্রি . ) রাজতন্ত্রকে অবক্ষয়ের শেষ সীমায় নিয়ে যান ।
2. অভিজাতদের আধিপত্য : প্রশাসনে অভিজাত সম্প্রদায়ের আধিপতা শাসনব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে । প্রশাসন প্রচণ্ড দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে । ইনটেনডেন্ট ' নামে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীরা খুবই ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে । অভিজাত রাজপুরুষরা লেত্র দ্য ক্যাশে নামে এক রাজকীয় পরোয়ানার দ্বারা যে - কোনো বাস্তিকে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করে রাখার অধিকার পায় ।
3 | ত্রুটিপূর্ণ আইন : অষ্টাদশ শতকে ফরাসি আইন ছিল । অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ , জটিল ও দুর্বোধ্য । দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের আইন ও দণ্ডবিধি প্রচলিত ছিল । আইনগুলি ছিল অত্যন্ত নির্মম । সাধারণ অপরাধের জন্যও অনেকসময় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত ।
Answer:-ফরাসি বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা । যেকোনো বিপ্লবের মতো ফরাসি বিপ্লবের পিছনে সামাজিক , রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক কারণ দায়ী ছিল । পাশাপাশি দার্শনিকরা ফরাসি বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল । তাই বিপ্লবে তাদের অবদান কম নয় । যেসমস্ত দার্শনিক ফরাসি বিপ্লবে অবদান রেখেছিলেন তাদের ভূমিকা নিচে আলোচনা করা হল ---
মন্তেন্ধু : পেশায় আইজীবি ফরাসি দার্শনিক মন্ত্যে ছিলেন বিপ্লব বিমুখ এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক । 1748 খ্রি . তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ The spirit of laws - রাজার ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতার বিরোধিতা করে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমর্থন করেন । তার অপরগ্রন্থ দি পার্সিয়ান লেটার্স ' - এ ফ্রান্সের প্রচলিত সমাজ অভিজাততন্ত্র ও রাজতন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করেন ।
৩ ) ভলতেয়ার : কবি , নাট্যকার , সাহিত্যিক , দার্শনিক ভলতেয়ার ইউরোপীয় সাহিত্য জগতের মধ্যমণি । ভলতেয়ার প্রায় শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। সমকালিন ফ্রান্সের গির্জার দুর্নীতি , সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনাচার , বৈষম্যকে সর্ব সমক্ষে তুলে ধরে এক জাগরণ সৃষ্টি করেন । তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে স্থান দিয়েছেন । তাঁর মতে , “ সব ধরনের স্বাধীনতা - চিন্তা , মতপ্রকাশ লেখা , কাজ করার স্বাধীনতা " মানবিকতার বিকাশের আবশ্যিক শর্ত । ভলতেয়ার তীক্ষ্ণ ও ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় চার্চের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আক্রমণ হেনেছেন । তিনি ছিলেন প্রজাহিতৈষী রাজতন্ত্রের সমর্থক । তার রচিত দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল কাদিদ , লেতর ফিলোজফিক।ভলতেয়ারের লেখা প্রবন্ধ ও বক্তৃতা ফরাসি বুর্জোয়াদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল ।
রুশো : ফরাসি দার্শনিকদের মধ্যে সর্বপেক্ষা জনপ্রিয় রুশো । তাকে ফরাসি বিপ্লবের জনক বলা হয় । সামাজিক চুক্তি ' নামক গ্রন্থে তিনি বলেন “ Man is boch free . but every where he is in chains . " এই গ্রন্থে তিনি মানবজাতির আদি জীবন এবং ক্রম রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সংঘবদ্ধতার দিকে অগ্রসরের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন । তিনি বলেন যে মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন , সৎ ও সুখী । কিন্তু সমাজ তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রেখেছে । প্রকৃতির রাজ্যে ( State of nature ) মানুষ ছিল স্বাধীন ও সুখী । কিন্তু সমাজ ও সভ্যতার বন্ধন তাকে পরাধীন করেছে । সেই পুরাতন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় ।অসাম্যের সূত্রপাত নামক গ্রন্থে তিনি প্রচলিত সামাজিক কুসংস্কার ও বৈষম্য অত্যাচারের মূলে কুঠারাঘাত করেছেন । রাজার দ্বৈত অধিকারকে তিনি অস্বীকার করেছেন ।
বিশ্বকোষ :- দেনিস দিসেরো , দ্য এলেমবার্ট সমসাময়িক বিভিন্ন পণ্ডিতদের সহযোগিতায় 35 টি খণ্ডে বিশ্বকোষ সংকলন করে গির্জা , চার্চ ও প্রচলিত সমাজের দুর্নীতি তুলে ধরেন ফিজিওক্রাটস নামক গোষ্ঠী । কুইসনের নেতৃত্বে ফিজিওক্রটিস নামে এক অর্থনীতিবিদদের আবির্ভাব ঘটে যারা উদার বাণিজ্য নীতির সমর্থক ছিলেন । এইভাবে দার্শনিকরা তাদের রচনাবলির মাধ্যমে বিপ্লবের বীজ বপন করেছিল।
What is Declaration of Rights of Man and Citizen ? (ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা কী)
ফরাসি সংবিধান সভা মূল সংবিধান রচনার আগে ১৭৮৯ খ্রি ২৬ শে আগস্ট ‘ ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা ’ ( ' Declaration of Rights of Man and Citizen ) নামে একটি দলিল প্রকাশ করে ।
ঘোষণাপত্রের ভিত্তি : ফরাসি সংবিধান সভা কর্তৃক প্রকাশিত ‘ ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্র রচনার ক্ষেত্রে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ' এবং ইংল্যান্ডের ' ম্যাগনা কার্টা ’ ও ‘ বিল অব রাইট্স ' , লক , রুশো , মন্তেস্ক প্রমুখ দার্শনিকের মতাদর্শ প্রভৃতির বিশেষ প্রভাব লক্ষ করা যায় ।
মানুষের অধিকার ঘোষণাপত্রের শর্ত:- ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে –
[ 1 ] মানুষ জন্মগতভাবে মুক্ত ও স্বাধীন , [ 2 ] মানুষের জন্মগত অধিকারগুলি পবিত্র ও অলঙ্ঘনীয় , [ 3 ] আইনের চোখে সব মানুষ সমান , [ 4 ] রাষ্ট্রের প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হল জনগণ [ 5 ] যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অধিকারী , [ 6 ] বাকস্বাধীনতা , সংবাদপত্রের স্বাধীনতা , ধর্মীয় স্বাধীনতা , সম্পত্তির অধিকার প্রভৃতি হল মানুষের সর্বজনীন অধিকার ।
3 সীমাবদ্ধতা : ব্যক্তি গরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল । যেমন—
[ 1 ] ঘোষণাপত্রে সামাজিক সাম্যের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি । [ 2 ] এতে মানুষের অর্থনৈতিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি । [ 3 এতে শিক্ষার অধিকার সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি । 4 ] মানুষের সংগঠিত আন্দোলন করার অধিকার সম্পর্কেও ঘোষণাপত্রটি নীরব থেকেছে । [ 5 ] নাগরিকের অধিকারের কথা বলা হলেও তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ঘোষণাপত্রে কিছুই বলা হয়নি ।
গুরুত্ব : কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রের গুরুত্বকে মোটেই অস্বীকার করা যায় না । ঐতিহাসিক ওলার বলেছেন যে , এই ঘোষণার মাধ্যমে “ বিশেষ অধিকার ও অসাম্যের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার ও সাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । ঐতিহাসিক কোবান মনে করেন যে , এই ঘোষণাপত্র “ বিশেষ অধিকারের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগের সূচনা করেছে।
What is Sans-culottes ( সান-কুলটস কারা ?)
Sans-culottes ছিল শহুরে শ্রমিক, কারিগর, অপ্রাপ্তবয়স্ক জমির মালিক যারা ফরাসি বিপ্লবের সময় গণ-প্রদর্শণে অংশ নিয়েছিল । 'সান-কুলটস' নামটির আক্ষরিক অর্থ হল 'কুলোটস ছাড়া', একটি কুলোট হাঁটু-উঁচু পোশাকের একটি রূপ যা শুধুমাত্র ফরাসি সমাজের ধনী সদস্যরা পরতেন। নিজেদেরকে 'কুলোটস ছাড়া' পরিচয় দিয়ে তারা ফরাসি সমাজের উচ্চ শ্রেণীর থেকে তাদের পার্থক্যের উপর জোর দিচ্ছিল।
সান-কিউলোটস একটি দল যারা বিপ্লবে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল এবং কখনও কখনও বিপ্লব পরিচালনা করেছিল । এরা ছিল নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষ, কারিগর এবং শিক্ষানবিশ, দোকানদার, কেরানি এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ।
No comments:
Post a Comment