Monday, January 15, 2024

চন্দ্রযান 3 Chandrajan 3

 চন্দ্রযান 3 / রচনা চন্দ্রযান -3 /চন্দ্রযান -3 অভিযানে ইসরোর বিজ্ঞানের ভূমিকা/চাঁদের দেশে ভারত

ভূমিকা- আদিম মানুষ যখন বনজঙ্গলে থাকতো তখন থেকেই প্রকৃতিকে চিনতে শিখেছিল‌।প্রকৃতিকে বশে আনার জন্য তারা নিত্য নতুন কিছু আবিষ্কারের কথা ভাবত। সে ভাবনা আজও শেষ নেই। এই বর্তমান বিজ্ঞানের যুগেও তাই বিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রম করে অজানাকে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের মহাকাশ গবেষণাগার "নাসা" নতুন নতুন তথ্য এনে দিচ্ছে। বিশ্ব সৃষ্টি আদি কথা জানার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র 'ইসরো' আজ পৃথিবীর বুকে পরিচিত লাভ করেছে। পূর্ণিমা রাতে গোল চাঁদকে দেখে ঠাকুমারা  তাদের নাতি নাতনিকে চাঁদ দেখিয়ে বলতো "আয় আয়  চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা"।  তখন হয়তো কেউ ভাবতে পারিনি। ওই চাঁদ মামার মাটিতে কেউ পৌঁছাতে পারবে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রম করে আজ ভারতকে অনেক উঁচু জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে । ভারতের দ্বিতীয় মিশনের চরম ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য সফল হয়েছে। এটা শুধু ভারতেই গৌরব নয়, সারা পৃথিবীর গৌরব হয়ে ইতিহাসের খাতায় নতুন করে নাম লিখিয়েছে ভারত।

চন্দ্রযান 3 কী?

চন্দ্রযান 3 ভারতের এমন একটি উচ্চাভিলাষী মিশন যা চাঁদের পৃষ্ঠের সাথে সম্পর্কিত অনেক তথ্য পাবে। এই মিশনের সমস্ত কৃতিত্ব ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) কাছে যায়। চন্দ্রযান 3 এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশন 14 জুলাই 2023-এ ISRO দ্বারা চালু করা হয়েছিল। এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কীভাবে চন্দ্রযান সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু পৃষ্ঠে অবতরণ করবে। লঞ্চ এবং অবতরণের মধ্যে 40 দিন সময় ছিল। এই চন্দ্রযান 3 তৈরিতে সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই মিশনকে সফল করতে ইসরোর বিজ্ঞানীরা দিনরাত পরিশ্রম করছিলেন। 

বৈশিষ্ট্য: 

চন্দ্রযান-৩ এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু অংশে অবতরণ করেছে।

চন্দ্রযান 3 চাঁদে জল এবং বরফের পরিমাণ সম্পর্কে আমাদের তথ্য দেবে।

চন্দ্রযান 3 চাঁদে কতটা প্রাকৃতিক উপাদান এবং খনিজ পাওয়া যায় তা জানতেও আমাদের সাহায্য করবে।

চন্দ্রযান 3 তৈরি করার সময়, ভারত কোনওভাবেই বিদেশী প্রযুক্তির আশ্রয় নেয়নি। বরং বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণরূপে দেশীয় প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়েছেন।

চাঁদে কত ধরনের প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত আছে তাও খুঁজে বের করবে এই যান।

চাঁদের পৃষ্ঠের গঠন কেমন তা দেখতে চন্দ্রযান 3 বিজ্ঞানীদের কাছে ছবি পাঠাবে।

এই যানটি চাঁদে পৃথিবীর মতো পশু-পাখির বাস আছে কিনা তাও তদন্ত করবে।

যাত্রা শুরুর সময়কাল:- 

২০২৩ সাল ১৪ই জুলাই দুপুর ২ বেজে ৩৫ মিনিটে শ্রী হরি কোটার  সতীশ ধাওয়ান সেন্টার থেকে LVM মার্ক -৩ রকেটের পিঠে চড়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল । ৪২ দিনের সময় ধার্য করে এগিয়ে যায় চন্দ্রযান -৩। লক্ষ্য ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরু তে অবতরণ। ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ।  সফল হল ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ছটা বেজে চার মিনিটে। ইতিহাসের খাতায় নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখল ভারত। এর আগে চীন চাঁদের মাটিতে যান পাঠিয়েছিল । তবে দক্ষিণ মেরুতে নয় । ভারতের চন্দ্রযান দক্ষিণ মেরু জয় করে বিশ্বের এক নম্বর স্থানে জায়গা দখল করে নিল।

চন্দ্রযান-৩ গঠন:-

 চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডারের নাম বিক্রম এবং রোভারের নাম প্রজ্ঞান। এর ওজন ৩৯০০ কেজি। প্রায় চার টনের কাছাকাছি। রোভারের ছিল ছয়টি পা। পা গুলি ছিল খুব শক্তপোক্ত ১০° অ্যাঙ্গেলে বেঁকে গেলেও বিক্রম ঠিকমতো ল্যান্ড করতে পারত। সেভাবেই এটাকে তৈরি করা হয়েছিল। বিক্রমের মাথায় রাখা হয়েছিল ভারতের পতাকা।রোভার ওজন ছিল ২৬ কেজি। 

ইসরোর বিজ্ঞানী ভূমিকা:- 

তৃতীয় চন্দ্র অভিযানের নেতৃত্ব দেন "রকেট ওম্যান"ঋতু ক্যারিধান শ্রীবাস্তব।চন্দ্রজান টু ব্যর্থ হওয়ার পর তার ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীরা দিনরাত পরিশ্রম করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চন্দ্রযান-৩  মিশন এর কাজ শুরু করেন। সফলতাও পান।

ভারতবাসীর আবেগ:- ২০১৯ সালে চন্দ্রযান  টু অভিযান শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষের মন হতাশ হয়ে পড়ে গিয়েছিল‌। আর সেই হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য ২৩ তারিখ সকাল থেকে দিনভর উত্তেজনা ,উদ্দীপনা অবস্থায় টিভির পর্দায় চোখ রেখে দেখতে পাচ্ছিল চন্দ্রযান-৩  অবতরণের সময় কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। চন্দ্রযান পাঠানো ছবিগুলো বারবার টিভিতে দেখানো হচ্ছেছিল ।বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে গঙ্গার ঘাটে ঘাটে , বিভিন্ন তীর্থস্থানে চন্দ্রযান শুভকামনা পূজা দিতে মানুষকে দেখা গেছে। 

ভারতের গবেষণা কেন্দ্র ইসরো থেকে বৈকাল ৫টা ২০ থেকে লাইভ টেলিকাস্ট লেখাতে শুরু করেছিল । মানুষ দেখেছিল অভাবনীয়  দৃশ্য।চাঁদের বুকে পা রাখতে বিক্রমে ১৫ মিনিট সময় ধার্য করা হয়েছিল। শেষ ১৮ মিনিট খুব চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল বিক্রম। অবশেষে সেই সময় এসে গেল । চন্দ্রযান,-৩ পাখির পালকের মত ভাসতে ভাসতে চাঁদের মাটিতে নেমেছিল। সঙ্গে সঙ্গে ভারতবাসী উৎসবের আনন্দে  মেতে উঠেছিল।

উপসংহার :-বিজ্ঞানের মানুষের কাছে অনেক আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ মঙ্গল গ্রহে যান পাঠাচ্ছে। চাঁদের মাটিতে জান পাঠাচ্ছে একদিন হয়তো মানুষ মহাকাশে কৃত্রিম  স্টেশন তৈরি করবে, পৃথিবী অনেক এগিয়ে যাবে পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে জানার জন্য মানুষ আজ উদগ্রীব হয়ে উঠেছে একদিন হয়তো তা সত্যটা আসল বার করে ফেলবে। বিজ্ঞানের হবে জয়জয়কার।

No comments:

Post a Comment