4) সুয়েজ সংকট সৃষ্টির কারণগুলি লেখো । সুয়েজ সংকটের গুরুত্ব বা ফলাফলগুলি উল্লেখ করো । 3 + 5
উত্তর:- আরব - ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয় | আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল | মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখনও ব্রিটেন ও ফ্রান্স সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি । এর ফলে সুয়েজ সংকট তৈরি হয় |
[ 1 ] আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প : - নাসের চেয়েছিলেন মিশরের আর্থিক উন্নয়নের জন্য নীলনদের ওপর আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ করতে । কেননা , এই বাঁধের সাহায্যে ৮ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে জলসেচ করে সেগুলি আবাদি জমিতে পরিণত করা যাবে । আবার এই বাঁধের জলাধার থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তা শিল্পোন্নয়নে সাহায্য করবে । এই নির্মাণ প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছিল ১৪০০ মিলিয়ন ডলার । ইংল্যান্ড , আমেরিকা ও বিশ্বব্যাংক মিলিতভাবে এই প্রকল্পের জন্য ৭০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজিও হয় | কিন্তু এক বছর আলোচনা চলার পর আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রস্তাব বাতিল করে দিলে নাসের প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন ।
[ 2 ] সুয়েজ খাল জাতীয়করণ :- ক্ষুদ্ধ নাসের সুয়েজ খাল এবং সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির জাতীয়করণ করেন ( ২৬ জুলাই , ১৯৫৬ খ্রি . ) এবং ঘোষণা করেন যে , [ i ] এই সুয়েজ খাল থেকে আদায় করা অর্থ আসওয়ান বাঁধ নির্মাণে খরচ করা হবে । [ ii ] কোম্পানির বিদেশি অংশীদারদের প্রচলিত বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে । [ iii ] আন্তর্জাতিক যোগসূত্র হিসেবে সব দেশের জাহাজ এই জলপথ ব্যবহার করতে পারবে । এর ঠিক তিনমাস পরে ( ২৯ অক্টোবর , ১৯৫৬ খ্রি . ) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের গোপন প্ররোচনায় ইজরায়েল মিশর আক্রমণ করে ।
সুয়েজ সংকটের গুরুত্ব বা ফলাফল:-
[ 1 ] আরব দুনিয়ার পশ্চিমি বিদ্বেষ :- প্রথম আরব - ইজরায়েল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমেত পশ্চিমি শক্তিগুলি নিজেদের স্বার্থে নানাভাবে ইজরায়েলকে সাহায্য করেছিল । এমতাবস্থায় সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে মিশরের ওপর ইঙ্গ - ফরাসি আক্রমণ শুরু হলে মিশর - সহ গোটা আরব দুনিয়ায় পশ্চিম - বিরোধী মনোভাবের সৃষ্টি হয় ।
[ 2 ] শত্রুতা বৃদ্ধি :- সুয়েজ সংকট মিশর ও ইজরায়েলের মধ্যে শত্রুতাকে চরমে নিয়ে যায় | ইজরায়েলকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আরও জটিল হয়ে ওঠে ।
[ 3 ] মিশরের কর্তৃত্ব :- মিশর কর্তৃক সুয়েজ খাল জাতীয়করণকে আন্তর্জাতিক দুনিয়া স্বীকৃতি দিলে সুয়েজ খালের ওপর মিশরের কর্তৃত্ব দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ।
[4] ইজরায়েলের মার্কিন নির্ভরতা বৃদ্ধি:-সুয়েজ সংকটের জেরে সংঘটিত দ্বিতীয় আরব - ইজরায়েল যুদ্ধে ইজরায়েল আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এই ক্ষতিপূরণের জন্য ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় |
5) বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ে ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনার ভূমিকা কী ছিল ? 6 + 2
উত্তর:-
1 ] ট্রুম্যান নীতি:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন সংসদের এক যৌথ অধিবেশনে টুম্যান বলেন যে , এখন থেকে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে স্বাধীন জনগণ যদি সশস্ত্র সংখ্যালঘু অথবা বাইরের শক্তির আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে , সেক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করাই হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি । এই ঘোষণাই ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত ।
পটভূমি:-
[ a ] চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা :- ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত মিসৌরি প্রদেশের ফালটন শহরে এক ভাষণে সাম্যবাদের প্রসার রোধ করার লক্ষ্যে ইঙ্গ - মার্কিন যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান ।
[ b ] কেন্নানের বেষ্টনী নীতি :- মার্কিন বিদেশনীতির উপদেষ্টা জজ এফ . কেন্নান সোভিয়েত সম্প্রসারণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে এক প্রবন্ধ লিখে জানান , রুশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অহেতুক কোনো যুদ্ধে না গিয়ে আমেরিকার উচিত হবে যে অঞ্চলে সোভিয়েত প্রভাব রয়েছে তাকে সীমাবদ্ধ রাখা ।
উদ্দেশ্যে :-
[ a ] রাজনৈতিক :- যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান সোভিয়েত বা সাম্যবাদী প্রভাব প্রতিহত করার জন্য প্রতিরোধমূলক রণকৌশল গ্রহণ ।
[ b ] অর্থনৈতিক :- ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার অন্যতম লক্ষ্য ছিল , অর্থসাহায্যের নামে অন্যান্য দেশকে অস্ত্র ও শিল্পজাত ঢুক বিক্রি করে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানো ।
মার্শাল পরিকল্পনা:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্শাল তাঁর ভাষণে বলেন— যুদ্ধবিধবস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য , মুধা , হতাশা , বেকারত্ন সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকটমোচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অথসাহায্য দেবে ।
পটভূমি :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল । এইসমস্ত দেশ আমেরিকার কাছ থেকে অর্থসাহায্য না পেলে স্বাভাবিকভাবেই সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে , তখন আর এইসমস্ত দেশকে সাম্যবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত করা যাবে না । আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্শাল এই সত্যের পটভূমিকায় তাঁর পরিকল্পনার নীতি গ্রহণ করেন ।
উদ্দেশ্য :-
[ a ] সোভিয়েত প্রভাবমুক্ত ইউরোপ গঠন :- যুদ্ধবিধৰস্তু ইউরোপের দেশগুলিকে অর্থসাহায্য দিয়ে তাদের সোভিয়েত প্রভাব থেকে মুক্ত করা ।
[ b ] মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা :- অর্থসাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলির অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও মার্কিন আধিপত্য কায়েম করা ।
প্রয়োগ :- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে পশ্চিম জার্মানি সহ পশ্চিম ইউরোপের ১৬ টি দেশ মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল । এইসমস্ত দেশ মিলিত হয়ে গঠন করেছিল OEEC ( Organisation for European Economic Cooperation ) বা ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা " ।
No comments:
Post a Comment