Sunday, January 21, 2024

ট্রুম্যান নীতি ও ভারত ছাড়ো

 7. ট্রুম্যান নীতি কী ? মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল ? 4 + 4 

ট্রুম্যান নীতি : গ্রিস , তুরস্ক ও ইরানে রুশ অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিলে ওই দেশগুলিকে রুশ প্রভাব থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান গ্রিস ও তুরস্কসহ বিশ্বের যে - কোনো দেশে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন । এই ঘোষণা ' টুম্যান নীতি ' নামে পরিচিত ছিল । 

 সোভিয়েত বিরোধিতা : প্রেসিডেন্ট রুজভেন্টের উত্তরসূরি ছিলেন ট্রুম্যান রুজভেল্ট সোভিয়েত রাশিয়ার সাঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলেও ট্রুম্যান রুজভেল্টের উত্তরসূরি হয়েও সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর বিরোধিতা করতে থাকেন । তিনি সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভকে তাঁর ভাষায় ভর্ৎসনা করেন । তাই মলোটভ বলেছিলেন । যে , এই ধরনের ভৎসনা তিনি সারা জীবনে পাননি । 

ফুলটন বক্তৃতা চার্চিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি প্রদেশের ফুলটনের ওয়েস্ট মিনিস্টার কলেজে এক বক্তৃতায় বলেন যে সাম্যবাদ মানবসভ্যতার কাছে চ্যালের স্বরূপ । তাই সোভিয়েত আগ্রাসী নীতিকে রুখতে ইন্দো - মার্কিন যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে । 

 ট্রুম্যান নীতির লক্ষ্য 1947 খ্রিস্টাব্দে 12 মার্চ মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ' ট্রুম্যান নীতি ' ঘোষিত হয় । ট্রুম্যান তাঁর ভাষণে বলেন , যে সকল দেশ সশস্ত্র সংখ্যালঘিষ্ঠ অথবা বাহ্যিক শক্তির আধিপত্য স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে আমেরিকার কর্তব্য সেই সকল জনগোষ্ঠীর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া । 

সমালোচনা ডি . এফ . ফ্রেমিং টুম্যান নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন । তিনি এটিকে Effective Dec Jaration of War ' বলেছেন । ট্রুম্যান ঘোষণার ফলে এমন ধারার সৃষ্টি হয়েছিল যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ' চাপ ' এবং পাল্টা চাপ ' ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে না এই নীতির যারা সমালোচনা করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জোসেফ জোনস , ওয়াল্টার লিপম্যান প্রমুখ ।

 মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য জন মার্শাল 1947 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে মার্কিন নীতি ব্যাখ্যা করেন । তাই তার নাম অনুসারে এটি মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত । কতকগুলি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মার্শাল পরিকল্পনা প্রয়োগ করা হয়েছিল , এগুলি হল-

 ( 1 ) যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো , যাতে তারা সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাবাধীন । না হয়ে পড়ে ।

 ( 2 ) সাহায্যপ্রাপ্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিকে সাহায্যদানকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য সুনিশ্চিত করা।

 ( 3 ) সাহায্যপ্রাপ্ত ইউরোপীয় দেশগুলি নিয়ে একটি রাষ্ট্রজোট গঠন করা , যার মাধ্যমে সোভিয়েত রাষ্ট্রের আগ্রাসী মনোভাবকে প্রতিরোধ করা যায় । 

( 4 ) পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থপূরণের উপযুক্ত বাজার গড়ে তোলা । পরিশেষে বলা যায় যে , মার্শাল পরিকল্পনার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল দয়া দেখিয়ে সাম্যবাদের ভিত্তি ধ্বংস করা ।

1942 সালের ভারতছাড়ো আন্দোলন সম্পর্কে নিবন্ধ লেখো । অথবা , ভারতছাড়ো আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো । 

উত্তর সূচনা : জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে সর্বশেষ ও সর্বভারতীয় আন্দোলন ' ছিল । 1942 - এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন বা আগস্ট আন্দোলন । গান্ধিজি পরিচালিত এই আন্দোলন ছিল সর্বাপেক্ষা ব্যাপক ও ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ । 

প্রস্তাব গ্রহণ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অশান্ত ভারতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে 1942 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সমিতির অধিবেশনে ' ভারত ছাড়ো ' প্রস্তাবে বলা হয় যে শুধু ভারতের মঙ্গলের জন্যই নয় , ফ্যাসিবাদ , নাৎসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অবসান এবং বিশ্বের নিরাপত্তার জন্যও ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান একান্ত জরুরি । এই প্রসঙ্গে গান্ধিজি ঘোষ করেন করেছেন করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে ।

 • ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূচনা : 1942 খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট রাতে বোম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেস সমিতির অধিবেশনে বিপুল ভোটে ভারতছাড়ো প্রস্তাব পাশ হয় । ঘোষণা করা হয় 9 আগস্ট থেকে সারাভারতে ভারতছাড়ো আন্দোলন শুরু হবে এবং ইংরেজ ভারত ছাড়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে । কিন্তু ৪ আগস্ট মধ্যরাতে গান্ধিজি , জওহরলাল , প্যাটেল , জে বি কৃপালনি সহ শীর্ষনেতাদের ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করলে পরদিন সকালে সারাভারত গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে । 

ভারতছাড়ো আন্দোলনের বিস্তার : কোনো শীর্ষনেতা ছাড়াই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে । 

প্রথমত , বাংলার মেদিনীপুর জেলার তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় এই আন্দোলন সবথেকে তর আকার ধারণ করে । তমলুকে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে । এছাড়াও কলকাতা , ঢাকা , হুগলি সহ বাংলার বিভিন্ন স্থানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ।

 দ্বিতীয়ত , বিহারের মুঙ্গের ভাগলপুর , মুজাফ্ফরপুর , যুক্তপ্রদেশের আজমগড় , জৌনপুর , গোরক্ষপুর প্রভৃতি জেলায় গান্ধিজির “ করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে ” ধ্বনি জনগণকে স্বাধীনতালাভে ব্যাকুল করে । 

তৃতীয়ত , বোম্বাই আমেদাবাদ , পুনা প্রভৃতি অঞ্চলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পানি কটক , বেনারস প্রভৃতি স্থানে আন্দোলনকারীরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় । 

আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ : ভারতছাড়ো আন্দোলনে গান্ধিজির ডাকে যাঁরা দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ , অরুণা আস আলি , সুচেতা কৃপালনি , অজয় মুখার্জি সুশীল ধাড়া প্রমুখ । এছাড়াও আসামের 13 বছরের স্কুলছাত্রী কনকলতা বড়ুয়া ও মেদিনীপুরের তমলুকের 73 বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনি হাজরা ছিলেন । উল্লেখযোগ্য ।

ব্যর্থতার কারন :- 

উপযুক্ত নেতৃত্বের অনুপস্থিতি : ভারত ছাড়ো আন্দোলন গান্ধিজির একক নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল ছিল । কিন্তু আন্দোলন শুরু হওয়ার পরই গান্ধিজি সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের কারারুদ্ধ করা হয়েছিল । গান্ধিজির অবর্তমানে আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো ব্যক্তিত্ব সেসময় দেশে ছিল না ।

 তাঁর দমন নীতি । এই আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার তীব্র দমননীতি অনুসরণ করেছিল । দৈহিক নির্যাতন , গ্রেফতার , ঘর পুড়িয়ে দেওয়া , গুলি চালানো কোনো কিছুই বাদ দেওয়া হয়নি । 

অন্যান্য দলের বিরোধিতা : কমিউনিস্ট দল ভারত ছাড়ো আন্দোলন মেনে নেয়নি । আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা ব্রিটিশকে মদত দেয় । মুসলিম লিগ - সহ অন্য দলগুলিও কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি 

অ সময়ে সূচনা 1939 খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন এই আন্দোলন শুরু করার পক্ষপাতী ছিলেন । আর গান্ধিজি আন্দোলনের ডাক দেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্বে । সেসময় ইংল্যান্ড যুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল ।

No comments:

Post a Comment